নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল । তাঁর একটি অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । যদিও ডাবলু সরকার পুরো বিষয়টিকে ‘এডিট’ বলে দাবী করেছেন । এমনকি , ভিডিওটি মিথ্যা দাবি করে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন ডাবলু সরকার।
গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে ৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ভিডিওটিতে দেখা যায়, বাথরুমের ভেতরে ডাবলু সরকার ভিডিও কলে কারো( নারী) সঙ্গে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে বিবস্ত্র হয়ে অপরপ্রান্তে থাকা কাউকে শরীর তথা যৌনাঙ্গ দেখাচ্ছেন।
ভিডিও সম্পর্কে রাজশাহী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেছেন , ‘ ভিডিওটি এডিট করা । সম্পূর্ণ ফেইক । আমরা মামলা করেছি । তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। ‘
অস্বীকার করলেও ফাঁস হওয়া ভিডিও নিয়ে এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দলীয় নেতারা । জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘যেটা দেখেছি, সেটা ন্যক্কারজনক। ব্যাপারটা কি জানতে অনেকে গ্রাম থেকে ফোন করছে। আমি আশা করব, এটা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তা না হলে এটা দলের জন্য বিব্রতকর।’
ডাবলু সরকার পুরো বিষয়টি ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবী করে জানান , ‘ এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র । এটা আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতেও পারে। আবারও সত্যিটা বের হয়ে আসলে আমি সম্মানিতও হতে পারি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বিষয়টা দেখবে।’
তিনি আরও দাবী করেছেন , ‘ভিডিওটি এডিট করা। শরীরের ওপরের অংশটি আমার। আমি অনেক সময় জিমে খালি গায়ে থাকি। সেখান থেকে ভিডিওটি নিয়ে অন্য এক ব্যক্তির শরীরের নিচের অংশের সঙ্গে জোড়া দেওয়া হয়েছে। এই ভিডিওতে আমার কোনো কথা নেই। কোনো নারী নেই। এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগও নেই। শুধুই আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছে।’
এই নিয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন ডাবলু সরকার । মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, কে বা কারা তাঁকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে এডিট করে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করেছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়ার কথা ওই অনলাইন পোর্টালে লেখা থাকলেও সেটি কোথাও পাওয়া যায়নি।
ডাবলু সরকারের অশ্লীল ভিডিও বিষয়টি এখন তদন্তাধীন । তদন্ত শেষে সত্য কি বেরিয়ে আসবে সেটা সময়েই বলে দেবে । কিন্তু এই মুহূর্তে ডাবলু সরকারকে নিয়ে রাজশাহী আওয়ামী লীগ বিব্রত অবস্থায় আছে । তাঁর বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে নানা অভিযোগ । আছে রাজশাহীতে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ । যা নিয়ে হয়েছে দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) তদন্ত ।
এক সময় বাসের বুকিং সহকারী ছিলেন ডাবলু সরকার । আওয়ামী লীগের নেতা বনে এখন তিনি অঢেল সম্পদের মালিক । তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায় মানুষ । তবে ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় তৃণমূল পর্যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন ক্ষোভ বিরাজ করছে । তাদের দাবী , ভিডিও ফাঁসের ঘটনা ছাড়াও ডাবলু সরকার ‘বিতর্কিত’ । তাঁর বিরুদ্ধে নানা সময়ে দেশের সংবাদ মাধ্যমে নানা নেতিবাচক খবর বেরিয়েছে । যা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে ।
আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমানে বিতর্কিত, অডিও-ভিডিও স্ক্যান্ডাল, আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত, ভাবমর্যাদা নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর । এমন ঘটনায় দল থেকে বহিস্কারসহ কঠোর শাস্তির আওতায় এসেছেন অনেকে । তাহলে কেন ডাবলু সরকারের ব্যাপারে নিশ্চুপ তাঁর দল ? তদন্তের স্বার্থে হলেও দল থেকে তাঁকে বহিস্কার করা উচিৎ বলে মনে করেন অনেকে । যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্তে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারেন । তদন্তে নির্দোষ প্রমাণ হলে তিনি ফিরে আসুন রাজনীতিতে । কিন্তু দোষী হলে স্থায়ী বহিস্কার তো বটেই , তাঁকে আনা হোক আইনের আওতায় । তাতে আওয়ামী লীগেরই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে ।