জাতির সংবাদ ডটকম।।
‘মানবিকতা, আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবকতা’- এই প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টারি ফাউন্ডেশন—আইভিএফ এর দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশলা সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর কো—অপারেটিভ হাইস্কুলে এ কর্মশলা অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মশলায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন।
এদিন সকালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন সংস্থার চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার এম মিয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, আইভিএফ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম শাওন, স্থানীয় সভাপতি মো: আব্দুস ছালাম শেখ, আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো: আহাদুল ইসলাম মিয়া রতন, সমন্বয়ক শরিফ উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য মো: জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন রাজবাড়ী জেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক মো: আবুল হাশেম, রাজবাড়ী সরকারী মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: ইকরামুল কবীর এবং মো: নজরুল ইসলাম শাওন।
দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে অনলাইনে সেশন পরিচালনা করেন আক্তার হোসেন, আনোয়ার এম মিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে হাফিজ মনসুর রহমান। এছাড়াও সরাসরি সেশন পরিচালনা করেন নজরুল ইসলাম শাওন, ইকরামুল কবীর এবং আবুল হাসেম।
আক্তার হোসেন তার বক্তব্যে আইভিএফ’র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য, অতীত, বর্তমান কর্মকান্ড এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোকপাত করেন। এক্ষেত্রে, আইভিএফ এর কার্যক্রম ৮টি ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিতে এবং এসব এলাকার জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় আইভিএফ এর উদ্যোগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের কী ভূমিকা হবে এবং তারাও কীভাবে ব্যক্তিজীবনে এবং কর্মজীবনে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের অনুধাবন করান।
আনোয়ার এম মিয়া স্বেচ্ছাসেবকদের লেখাপড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, আর্থ—সামাজিক পরিস্থিতির কারণে অনেককেই সংসারের হাল ধরতে হয়। তবুও তারা যেন তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যান। সে সুযোগ দেশে বিদেশে সব জায়গাতেই রয়েছে। এক্ষেত্রে, আইভিএফ দরিদ্র মেধাবীদের আগে যেমন সহযোগিতা করেছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে।
মনসুর রহমান বলেন, সারা পৃথিবীতেই স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজন। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান যেমন উপকৃত হয় পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরাও তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি একসময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারেন। কেবল তাই নয় স্বেচ্ছাসেবী কাজের মাধ্যমে অনেকেই তাদের পছন্দমত জীবন সঙ্গীও পেয়ে যান।
প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ সেশন পরিচালনা করেন নজরুল ইসলাম শাওন। এসময়ে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের অনুগত ছাত্র—ছাত্রীদের মতো স্বেচ্ছাসেবকতার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি ইন্টারেক্টিভ আলোচনা করেন। একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের কী দায়িত্ব ও কর্তব্য, মানবিকতা, আত্মত্যাগ, আত্মশুদ্ধি অর্জনে স্বেচ্ছাসেবকতা কিভাবে সহযোগিতা করে- সেই বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক সেশনে ইকরামুল কবীর বলেন, দেশের সকল আইন যেখানে জনগণকে পরিচালনা করার জন্য ব্যতিক্রম কেবল এই তথ্য অধিকার আইন। এই আইনে জনগণ কয়েকটি ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া সরকারীসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে তাদের কর্মকান্ড ও হিসাবের তথ্য চাইতে পারে এবং তারাও সেটা দিতে বাধ্য থাকে।
এছাড়াও আইভিএফ এর স্বেচ্ছাসেবকদেরকে তিনি এই আইনের আওতায় তাদের এলাকায় যেসব কাজ হয় বা অফিস আছে তাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তথ্য চাওয়ার পদ্ধতি বুঝিয়ে বলেন এবং তথ্য চাইতে উদ্বুদ্ধ করেন তার আলোচনায়।
সর্বশেষ সেশনে আবুল হাসেম দরিদ্র ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রকল্প সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেন। স্বেচ্ছাসেবকরা কিভাবে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন এগুলো নিয়েও আলোচনা করেন।