ফেনী নদীর মুখে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দিঘী খননে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২, ২০২৩

 

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

মিরসরাই উপজেলার ফেনী নদীর মূখে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে মৎস্য প্রকল্প করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামের ফেনী নদীর পূর্বাংশে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিঘী খনন করা হচ্ছে। এতে করে পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে অবৈধভাবে দিঘী খননে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় জনসাধারণ শীঘ্রই অবৈধ দিঘী খনন বন্ধে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মুহুরী প্রজেক্ট বাজার থেকে মুহুরী প্রজেক্ট গেইট পর্যন্ত বয়ে যাওয়া সড়কের উত্তরাংশে ফেনী নদী বিশাল অংশ দখল করে অসংখ্য দিঘী খনন করার ফলে ছোট হয়ে গেছে ফেনী নদী। দখলের ফলে ফেনী নদীর পূর্বাংশে জোরারগঞ্জ-আজমপুর খালের পানি যাওয়ার পথটিও সরু হয়ে গেছে। বর্ষায় এই খাল দিয়ে মিরসরাই উপজেলার পূর্বাংশের পাহাড়ী পানি বঙ্গোপসাগরে মিশে যায়। এখন পানি প্রবাহের সে পথটি নদী দস্যুদের কারনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে । এই পথ ঘেঁষে মিরসরাই উপজেলার ৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামের অবস্থান। গ্রামটি ফেনী নদীর উপকূলে হওয়ায় বর্ষায় পানি প্রবাহের গতি বৃদ্ধি পেলে এই গ্রামের শতাধীক বাড়িঘর পানিতে ভাসে । এবার নতুন করে দিঘী খননের ফলে আগামী বর্ষায় ওইসব পরিবার দীর্ঘ মেয়াদি পানিবন্ধী হয়ে পড়ার আশংকা করছে । ইতিপূর্বে বর্ষায় তাহের আহম্মদের বাড়ী, ফয়েজ বক্স ভূঁইয়া বাড়ী, নাছির উদ্দিনের বাড়ী, হাছান আলী মিয়াজী বাড়ীসহ শতাধিক পরিবার পানিতে নিমজ্জিত হয়। তাই তারা দাবী জানান দ্রুত যেন প্রশাসন অবৈধ দিঘী খনন কাজ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়। মৎস্য প্রকল্প নির্মাণ তদারকি কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মোঃ শিমুল জানান, সরকারি খাস কিনা জমি কিনা জানিনা। তবে এখানে কামরুল ইসলাম, দৌলতবিবিবি মসজিদ এবং আরো একজন মালিকের বিএস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে শুনেছি । আমি প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের তদারকি করছি। প্রতি চেইন (এক চেইনে ১০০ফুট) ৮০ হাজার টাকা করে আমার সাথে চুক্তি হয়েছে। মালিকরা হলেন শিপন,মিরাজ,নিজাম,জাহেদ,সাত্তার গং। তারা বিস্তারিত বলতে পারবে।

দিঘী খননে নিয়োজিত শ্রমিক দিদারুল আলমসহ ৭-৮জন ৫ শত টাকা মজুরিতে ৪ দিন যাবত কাজ করছেন। প্রায় ৬ একরের এই দিঘীটি আগামী ৪ দিনের মধ্যে খনন কাজ শেষ হবে’ বলে জানান তিনি।

অবৈধভাবে দিঘী খননের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায়। এখানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। আমরা এতকিছু জানি না।’

এলাকার প্রবীন মৎস্য চাষী কামরুল ইসলাম জানান, কে বা কারা আমার নাম প্রচার করেছে জানিনা। আমি এখানে মৎস্য প্রকল্পের সাথে জড়িত নয়৷ আমার বিএস খতিয়ানভুক্ত জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় কিছু লোক মৎস্য প্রকল্প করছে শুনে তাদের মধ্যে মিরাজকে জিজ্ঞাসা করি। সে আমাকে জানায় আমার যেটুকু জমি তাদের প্রকল্পে পড়বে ইজারা হিসেবে আমার অংশের টাকা দিবে। এর বেশি কিছু জানি না।

এ বিষয়ে জানতে মিরাজকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ দৌলা বলেন, ‘এমনিতে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। ফেনী নদীতে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিঘী খনন করার কারণে দীর্ঘদিন পানিবন্ধী হয়ে পড়ার আশংকা করছি। তাই দ্রæত অবৈধ দিঘী খনন বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’

স্থানীয় হাছিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার। বর্তমানে আমাদের বাড়ী যেখানে এর অনেক পশ্চিমে ফেনী নদী ছিল। ভাঙ্গনের কারণে সেটি এখন আমাদের বাড়ী পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। বর্ষাকালে পানিতে আমাদের বাড়ী তলিয়ে যায়। অবৈধভাবে দিঘী খননের কারণে আমরা আগামী বর্ষায় বাড়িতে থাকতে পারবো কিনা জানি না। তাই সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।’ মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি আমি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখে আইনগত পদক্ষেপ নিবো। সরকারী জমি এবং পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে কিছুই করতে দেওয়া হবেনা। মৎস্য প্রকল্প করতে হলে ভূমি এবং জলাশয় আইন মেনে করতে হবে। অন্যথায় ছাড় দেওয়া হবেনা।