জাতির সংবাদ ডটকম।।
গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, দু:শাসনের কারনে দেশ মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দেশ বাঁচতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান তিনি।
আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে দৈনিক দিনকালসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া দাবি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি ও ডা. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এক পেশাজীবী সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক শামসুল আলম, প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম,অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ড. এন্তাজ হোসেন, প্রফেসর ডা. মোসাদ্দেক হোসেন ডাম্বেল, সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক রাশেদুল হক, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী ,অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ইঞ্জিনিয়ার হানিফ, ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে গয়েশ্বর রায় বলেন, এখন আমাদের মুখ্য দাবি হওয়া দরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে এই সরকারকে প্রত্যাহার করতে হবে, এই সরকারকে সরাতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে সুষ্ঠু ও অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা এখন অপরিহার্য।
ঢাকা বিভাগের বিএনপি সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এবং বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সাথে বিএনপির মতবিনিময় সভার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একজন চেয়ারম্যান বলেছেন, জনগণ থাকবে নিরাপদে ঘরে, ভোট দেবে প্রশাসন, সন্ধ্যায় ফল গণনা করবে নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ জনগণ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন না, ২০১৮ সালের নির্বাচন দেখেছেন, কারা ভোট দিয়েছে? প্রশাসন। প্রশাসন বলতে বুঝায় ডিসি-এসপি পুলিশ ইত্যাদি। কে কত ভোট দিতে পারে। কারণ ভয়, না হয় চাকরি যায়। দেশটা আমার একার নয়, আপনারও নয়। যারা পুলিশে চাকরি করেন, পুলিশে আজীবন চাকরি করবেন না।
চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর রায় বলেন, দেশের কথা চিন্তা করেন, ১৯৭১ সালের মতো গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের রুখে দাঁড়ান। ১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি; সেই গণতন্ত্রের জন্য আমরা এখন যুদ্ধ করছি। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন, নাকি বিরোধিতা করবেন? অংশগ্রহণ করলে ভালো, না করলে ১৯৭১ সালের মতো রাজকারের খাতায় নাম লেখাবেন।
১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন আওয়ামী লীগও আরেকটি শান্তি কমিটি করছে। যেদিন আমরা কর্মসূচি করি, সেদিন এই শান্তি কমিটিও কর্মসূচি দেয়। এই শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ওবায়দুল কাদের। আমার মনে হয় ওবায়দুল কাদের তার পারিবারিক সূত্রের অভিজ্ঞতা পাওয়া। আমি বিশ্বাস করি, তিনি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করবেন। কোনো কমিটি এই সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশপ্রেমিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে সবাইকে বুঝতে হবে, এই সরকার জাতীয়তাবাদী নয়, দেশপ্রেমিক নয় এবং গণতান্ত্রিক নয়। যার কারণে জনগণের কথা তোয়াক্কা করে না।
প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গত দু’টি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে পরদিন ওই ব্যালট পেপার গুনে ক্ষমতা দখলের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ সবার সামনে উঠে এসেছে। এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।
তিনি বলেন,গণতন্ত্র ও আইনের শাসন আজ পুরোপুরি অনুপস্থিত। গুম, খুন, অপহরণ, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে। বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ ভূলুণ্ঠিত। বিচারের বাণী আজ নীরবে কাঁদছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সীমাহীন বৃদ্ধির কারণে আজ দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। দেশ থেকে লুটেরা গোষ্ঠী হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। কেউ যেন দেখার নেই। ধীরে ধীরে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশে দারিদ্র আর বিদেশে সম্পদ গড়ার উৎসব চলছে। আর এ কারণেই দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। সাধারণ মানুষের আজ তিন বেলা খাওয়া জুটছেনা,অথচ আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠী হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
তিনি বলেন, একদল মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে একটি পয়সাও শোধ করেন না, কিন্তু তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে ‘রাষ্ট্রীয় জামাই আদর’। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেশে থেকে পাচার হয়ে যায়, কিন্তু কারও যেন কিচ্ছু করার নেই। সুইচ ব্যাংকে টাকার পাহাড় জমে, কানাডা, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশে গড়ে ওঠে ‘বেগমপাড়া’। শিল্পপতি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ‘জনগণের কামলা’—কে নেই সেই তালিকায়!