দেউলী অক্সফোর্ড স্কুলের গৌরব আর ঐতিহ্যে এক যুগ পার

রবিবার, মার্চ ৫, ২০২৩

 

 

মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ, মির্জাগঞ্জ থেকে।

 

সময়টা ২০০৯ সালের শেষের দিকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার মোঃ শফিকুল ইসলাম খান নাড়ির টানে গ্রামে আসলেন। স্থানীয় মুরুব্বি ও যুবকদের নিয়ে সভা বসালেন। সবাইকে জানালেন তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। মান সম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানে তাঁর এই উদ্যোগকে সকলেই স্বাগত জানালেন। স্থানীয় একটু জমি কিনে নিলেন নিজ অর্থায়নে। তারপর নির্মাণ করলেন এল সাইজের টিন শেড ঘর। ২০১০ সালের ১লা জানুয়ারি ৮৪ জন শিশু শিক্ষার্থী (শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ )নিয়ে যাত্রা শুরু হলো অক্সফোর্ড কিন্ডার গার্টেন নামে একটি ভিন্ন ধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রাম তথা দেউলী বাজার ঘেঁষে রানীপুর থেকে কাউনিয়া সড়কের পাশে স্থান মেলে যার। তখন পূর্ব দেউলীর সরদার বাড়ির মোঃ দেলোয়ার হোসেন (লাল মিয়া সরদার) কেবল গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসর নিয়েছেন। ছিলেন ঐ ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক। অত্যন্ত মেধাবী ও দূরদর্শী সম্পন্ন মানুষ। দায়িত্ব নিলেন স্কুলটির প্রিন্সিপাল হিসেবে।

পরিচালনা পর্ষদের সর্ব সম্মতিতে মোাঃ শফিকুল ইসলাম খান চেয়ারম্যান হলেন। সরকারি চাকরি করার সুবাদে তাঁর ক্ষেত্রে এলাকায় থাকা অসম্ভব। যে কারণে তাঁরই আপন বড় ভাই ইউনুস আলী খানকে দায়িত্ব দিলেন সবকিছু দেখভাল করার জন্য।

এরই মধ্যে চেয়ারম্যানের ভাতিজা মানে ইউনুস আলী খানের ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম খান স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। শিক্ষকতা পেশায় আসার প্রস্তাব দেওয়া হলে উৎকন্ঠাবিহীন সানন্দে এই মহান পেশাটিকে গ্রহণ করে নেয়। ভাইস প্রিন্সিপাল করা হয় তাকে। সাথে যুক্ত হয় আরেক স্নাতকোত্তরধারী মোঃ রাসেল মিয়া। ১৪ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়ে ধীর যাত্রার অক্সফোর্ড হঠাৎ পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝঁলসে ওঠে।

২০১২ সালে অনুমোদন পায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার এবং অংশগ্রহনের সুযোগ মেলে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষারও। ২০১৩ সালে প্রথম চমক আসে ২জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি প্রাপ্তির মাধ্যমে। পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আর। ২০১৪ সালে আবারো ২ জন, ২০১৫ সালে ৪জন ট্যালেন্টপুল ও ৪জন সাধারণ বৃত্তি,২০১৬ সালে ৬জন ট্যালেন্টপুল ২জন সাধারণ, ২০১৭ সালে ২জন ট্যালেন্টপুল ৪জন সাধারণ, ২০১৮ সালে ১জন ট্যালেন্টপুল ১ জন সাধারণ, ২০১৯সালে ২ জন ট্যালেন্টপুল ও ১জন সাধারণ বৃত্তি পায়। এরপর ২ বছরের জন্য বোর্ড কর্তৃক সারাদেশেই বৃত্তি বন্ধ থাকে। আবার চালু হলে ২০২৩ এ (২০২২এর পরীক্ষা) এই বছর ৪জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার গর্বোজ্জ্বল রেজাল্টতো রয়েছেই প্রতিবছর। অবাক হতে হবে এই স্কুলে কারা এবং কতদূর থেকে এসে পড়ে তা জেনে। দরিদ্র ও মেধাবীরা রয়েছে প্রথম কাতারে। মির্জাগঞ্জ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়নের পাশাপাশি ১০ কিলোমিটার ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার কয়েক ইউনিয়ন থেকে অভিভাবকরা নিয়ে আসে তাঁদের সন্তানদেরকে অক্সফোর্ডে পড়াতে। এজন্য একদম বেগ পোহাতে হয়না কিন্তু তাঁদের। স্বস্তির খবর হচ্ছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যাতায়াতের জন্য স্কুলের রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। রয়েছে তিন তিনজন নিজস্ব গাড়ি চালক।

প্রতিবেদন তৈরির স্বার্থে কথা হয় আভিজাত্যের পিলার নির্মাণে নির্ঘুম প্রহরা ভাইস প্রিন্সিপাল শিক্ষক মোঃ আরিফুল ইসলা খান’র সাথে। জানালেন বারোমাসী সকল কষ্টের মাঝে এক চিলতে হাসি তখনই ফোঁটে যখন শিশুদের মুখে ভালো ফলাফলের হাসি দেখতে পাই।

প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা না বললে নয়। তিনি বলেন; অক্সফোর্ড স্কুল পরিবারের সকল সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলশ্রুতিতে আজকের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। জানা গেল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদে কে বা কারা রয়েছেন। মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রিন্সিপাল, আরিফুল ইসলাম খান ভাইস প্রিন্সিপাল, মোঃ রাসেল মিয়া, আয়েশা সিদ্দিকা ,শামসুর নাহার ডলি, মঞ্জু বেগম,রেশমা অক্তার ,সাথী আক্তার, রাবেয়া আক্তার, ইতি মনি, মানসুরা আক্তার, লিলি আক্তার ,আফরোজা বেবি শিক্ষক হিসেবে এবং ইনচার্জে ২য় ক্যাম্পাসে আছেন সাইফুল ইসলাম ও মোঃ ইউনুচ আলি খান।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শিক্ষানুরাগী মোঃ শফিকুল ইসলাম খান’র সাথে কথা না বলতে পারলে স্কুলের গল্পটা যেন ওখানেই সমাপ্ত হয়ে যেত। যিনি কিনা অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, মিশুক স্বভাবের এবং পরিচালক হিসেবে সুদক্ষ। এক কথায় দুর্দান্ত ও প্রশংসনীয়। ফলাফলের ভিত্তিতে অক্সফোর্ড কিণ্ডার গার্টেন স্কুলকে উপজেলায় নয় সমগ্র জেলায় একটি স্বাতন্ত্র্যধর্মী ও মডেল প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণের ধারাবাহিকতায় তাঁদের চেষ্টার অন্ত নাই বলে স্কুলের শিক্ষক, ষ্টাফ, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সকলের নিরলস শ্রমে আজকের অবস্থান তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিবাদন জানালেন মিঃ শফিকুল ইসলাম খান।