মা মানেই যুগান্তরের ডাক, কালান্তরের টান

শনিবার, জুলাই ৫, ২০২৫

 

 

সৈয়দা রাশিদা বারী

লেখক: বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক

সন্তানের ওপরে মায়ের সজাগ দৃষ্টি হরিণী কান। মা মানেই যুগান্তরের ডাক, কালান্তরের টান। কেবলই সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়, জীবনের সুনিশ্চিত নিরাপত্তার কামনাই। তাই মা যদি পুত্র ও পুত্রবধূর ঘরে এবং তাদের কথাবার্তা চলাফেরা মা ফলো করেন, বাংলা ভাষায় যেটাকে বলে ওৎপাতা। যদি মা এমন করে পুত্র এবং পুত্রবধূর ঘরে পাতা দেন, মন সজাগ রাখেন, কান খাড়া করেন, চোখ খোলা রাখছেন, সেটা মায়ের অন্যায় নয়। মা কিন্তু জন্ম দেওয়া কচি শিশু থেকে তার সন্তানের নিরাপত্তা বিবেচনায়, সন্তানের সবকিছুতে কান খাড়া, চোখ খোলা রেখেছেন।

এমনকি খেলাধুলার মাঠ, ইস্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, চাকরি ক্ষেত্রে এই সমস্ত এবং সবকিছুতে মা এইভাবে পাতা দিয়ে আসছেন, কেউ কি সেটা গবেষণা করে দেখেছেন? দেখেন নাই। দেখেন শুধু পুত্রবধূ এবং পুত্রের বেলায়? কেন রে ভাই? ছেলেকে ওই পর্যন্ত কে এনেছে? পুত্রবধূ? না পুত্রের মা? তখনও কিন্তু তোমরা তৃতীয় পক্ষরা মাকে সহযোগিতা করো নাই? ছেলেকে মানুষ করার পথেও বাঁধা দিয়েছো?

এখন পুত্র এবং পুত্রবধূর সাথে সে সুখী হবে সেখানেও তোমরা বাধা দিতে জটিলতা করছো? মা সন্তানকে ফলো করে, কোন আনন্দ-বিনোদন উপভোগ করতে বা কোন স্বার্থে নয়, শুধুই তার সন্তানের নিরাপদে রাখতে, সন্তানের একটা স্থায়িত্ব সুখ-আশ্রয়, নিরাপত্তার কামনার স্বার্থেই। নিরাপত্তার জন্য, এটা এমনভাবে না করলে মা বুঝবে কেমন করে? তার আশা ভরসা সম্বল, এতদিন ধরে মানুষ করা সন্তান, যাপিত জীবন হঠাৎ সংসার জীবনে কেমন সেটেল হলো? মায়ের কাছে আর সন্তানের কি লুকোবার, লুকোচুরির আছে?

কেননা সন্তানের কোথায় দাগ আছে, কোথায় কেমন, সন্তানের অস্তিত্বের সব মাই তো জানেন। মায়ের সমান স্ত্রীর জিন্দেগি উল্টে গেলেও হবে না। হওয়ার নয়। সাত্ত্বিক হৃদয়ে চিন্তা করে গবেষণা করে দেখুন কথা ঠিক কিনা? সারা জীবন নষ্ট করে মানুষ করা সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গর্ভে ধারণ করা মায়ের দায়িত্ব। হোক সেটা স্কুল-কলেজ, অফিস- আদালত এবং যেকোনো মানুষের কাছে। আর স্ত্রীকে ঘিরে তো বটেই দায়িত্ব আছে। সংসার জীবনে সেটল করার পর, আর মায়ের দায়িত্ব মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত, নামাজে বসে তার সন্তান যেন বেহেস্তে যায়, সেই কামনা করা।

তখন তিনি প্রার্থনা করবেন, হে স্রষ্টা হে আল্লাহ তুমি আমার সন্তানকে পরপারে স্বর্গ দিও। এটাই হয় একজন মায়ের লাস্ট কামনা। প্রার্থনায় কখনো বলে না, আমাকে জান্নাত দিও। কিন্তু বলে আমার সন্তানকে বেহেস্ত নসিব করিও, জান্নাত দিও। হ্যাঁ, একজন পুত্রের স্ত্রীকে যাচাই বাছাই করে দেখুন, তার সন্তানের উপযুক্ত কিনা? আর সন্তান তার হাতে নিরাপদ কিনা? সেটা মাকেই বুঝতে হয়। মায়ের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

আর ওই সন্তান কিন্তু মায়ের। যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়, যাচাই-বাছাই করে পুত্রবধূর হাতে বুঝে না দেবে। ততক্ষণ স্বামীর মালিক এবং সম্পূর্ণ অধিকার স্বামীর উপরে স্ত্রীর হয় না, হতে পারে না। ক্রয় করলেও জমির মালিক জমির দায়িত্ব বুঝে না দিলে, সেটা কিন্তু হয়না। কাজে তো সেজন্যই বাধে। বিয়ে তো হয় বাহ্যিক রূপে, মানুষ দিয়ে দেয়। কিন্তু স্বামীকে সম্পূর্ণ পেতে, স্বামীর মায়ের থেকে বুঝে নিতে হয়। এটাই হলো আসল পাওয়া। বিয়ে হয়েছে আর স্বামী আমার সম্পূর্ণ হয়ে গেছে তা নয়। স্বামীর মায়ের থেকে পরবর্তী আর একটা দেখ ভাল কর্ম আছে, সেটাই হলো প্রকৃত একজন স্ত্রীর আসল কর্ম। মা সব সময় উপলব্ধি করতে চান কার হাতে তার সন্তান রেখেছি অথবা দিয়েছি।

ওখানে তার সন্তানের জন্য কতখানি নিরাপদ? হ্যাঁ, মা অবশ্যই সন্তানের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হতে চান সে যেই হোক, প্রত্যেক মানুষের কাছে। তাই সেই আওতায়, সন্তানের স্ত্রীও পড়ে। এই জন্যই পুত্র, পুত্রবধূর ঘরে ওৎপাতা দেন। এটাতে মায়ের অন্যায় নেই। অন্যায় হবে এই ব্যাপারে যখন পুত্রবধূ স¦ামীর মাকে উল্টো ফলো করবে। কারণ ওর স্বামীর মাকে ফলো করার অধিকার নাই। কিন্তু ওদের ফলো করার অধিকার স্বামীর মায়ের আছে। যেহেতু স্বামী স্বামীর মায়ের পেটে ধরা সন্তান। জানতে হবে, পেটে ধরা সন্তান মানে কি।

পেটে ধরার সন্তান বলেই তো মা সন্তানের সাথে সাথে থাকেন। কোন কোন মা এমন কি পুত্রের হানিমুনেও সাথে যান। কেননা হানিমুনে গেলে অনেক মায়ের সন্তানই আর ফিরে আসে না। পুত্রের স্ত্রীর প্রেমিক নিঃশেষ করে দেয়। অতএব উড়ে এসে জুড়ে বসা ডাইনি পুত্রবধূ হলে, অশ্লীল পুত্রবধূ হলে, অমার্জিত পুত্রবধূ হলে, মা পুত্রের সাথে যান। এই জিনিসটা বুঝতে হলে গবেষণা করতে হবে, সাধারণ কেউ বুঝবে না। এটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক অবশ্যই নয়। মা তো তার সন্তানের সবই জানেন। মায়ের কাছে আবার কি লুকোচুরি লুকোবার আছে? মায়ের কাছে আবার কিসের লজ্জা?

কিসের ভয়? মায়ের কর্তব্য সন্তানের প্রতি মা পালন করবেই। হয়তো কেউ অধিক সেয়ানা শয়তান জবরদস্তি বেয়াদব পুত্রবধূর কাছে বেইজ্জতি হয়, ধরা পড়ে। ষড়যন্ত্রকারী, কুমতলবী, সেয়ানা, বেগানা সিংহী খারাপ পুত্রবধূ, সে এটা করে ইচ্ছাকৃত। সে স্বামীর মাকে অপমান অপদস্থ করার জন্য করে। তার কুস¦ার্থ হাসিল করতে না পারার জন্য রাগে ক্ষোভে করে। যদি ভদ্র, সভ্য, আদর্শবান, মেয়ে হয় এবং কুমতলব না থাকে, তাহলে সে ওটা করে না। কেননা সে জানে, বুঝতে পারে বোঝে, এটা মা মানুষের দায়িত্ব। তাই প্রকাশ করে না।

মেয়ের নিজের মাও তো এটা করে। যেমন তার মায়ের সেটা প্রকাশ করে না। মেয়ের মা এটা আরো বেশি করে, তার মেয়ের সহযোগিতায়। মেয়ে মেয়ের মায়ের কাছে জামাই সম্পর্কে খোলামেলা সবই বলে। ছেলে ছেলের মায়ের কাছে বলেনা। এই ছেলের লুকানো গোপন করা দোষের জন্যই ছেলের মা লুকিয়ে তদন্ত করেন।

যার সোনার খনি, মূল্যবান সম্পদ, গয়না, অলংকার, অহংকার, সেই নিজেই যদি পাহারা দেয়, লুকিয়ে দেখ ভাল করে। একজন মালিক তার মাল কেমন নিরাপত্তা নিরাপদে আছে, সেটা বুঝতে চেষ্টা করে গোপনে লুকিয়ে। এতে ওই মালিকের কোন দোষ নাই, বরং সে আরো ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিয়েতে ক্লাবে হানিমুনে সবখানে মা মায়ের মত সাথে থাকতে পারেন, এটা কোন খারাপ বিষয় নয়। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। যে মেয়ে খারাপ, কুবুদ্ধির, কুমতলবি, সে খারাপ ফরমেটে ফেলে, শাশুড়ির দুর্নাম দেয়, খারাপ বলে জাহির করে।

আর যাদের কুমতলব না থাকে বরং তারা খুশি হয়। তারা শাশুড়িকে নিরাপদ খুঁটি মনে করে। একজন জন্ম দেওয়া মা মায়ের কর্তব্য সন্তান কেমন আছে, কেমন থাকবে ভবিষ্যতে, তার অবর্তমানে, সেটা যাচাই-বাছাই করা। এবং এইটা দেখার একমাত্র মায়ের দায়িত¦, মায়ের কর্তব্য।