জুলাই শহীদদের স্মরণে ঢাকায় এবি পার্টির প্রতীকী কফিন মার্চ  

শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫

 

জাতির সংবাদ ডটকম।।

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ জুলাই অভ‍্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দল,  সংগঠক ও এক্টিভিস্টদের পরস্পরের প্রতি হেয় করে উস্কানিমূলক কথা বলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টি। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় ঐক‍্যের ভিত্তিতে যারা রাজপথে অকাতরে রক্ত ও জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, ১ বছর যেতে না যেতেই তাদের একে অপরের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ শহীদের রক্ত ও আত্মদানের প্রতি অসম্মান বলে মনে করেন দলটির নেতারা। গোপালগঞ্জে ফ‍্যাসিবাদী আওয়ামী-ছাত্রলীগের গণতন্ত্র বিরোধী কর্মসূচি, সরকারের ব্যর্থতা ও নানা অবয়বে আওয়ামীলীগের পুণর্বাসন প্রচেষ্টার তীব্র সমলোচনা করেন তারা।

আজ জুলাই অভ‍্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে শহীদদের স্মরণে প্রতীকী কফিন রোড মার্চে এসব কথা বলেন দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। এবি যুব পার্টির সদস‍্যসচিব হাদিউজ্জামান খোকনের সঞ্চালনায় রাজধানীর বিজয় নগর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, উত্তরা, মীরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভা গুলোতে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, আলতাফ হোসাইন সহ  কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

জুলাই অভ‍্যুত্থানে ঢাকার যেসকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং নির্মম নির্যাতন ও নির্বিচার হত‍্যাকান্ডের শিকার হয়েও দমে যায়নি, যাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সারাদেশে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছড়িয়ে পড়েছিল সেসকল শহীদ ও অদম‍্য সংগ্রামীদের স্মরণে এবি পার্টি আজ এই প্রতীকী কফিন মার্চের আয়োজন করে। প্রতীকী কফিন মার্চ বিজয় নগরস্থ বিজয়-৭১ চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রথমে যাত্রাবাড়ী মোড়ে শহীদ চত্বরে যায়। সেখানকার পথসভা শেষ করে তারা ক্রমান্বয়ে বাড্ডা, উত্তরা হয়ে মীরপুর ১০ নম্বর চত্বরে এসে সমাপ্ত হয়।

পথসভাগুলোতে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও অপরিসীম রক্তদানের লক্ষ‍্য ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। হাসিনার দু:শাসনের অবসান বা তার পতনের মধ্যে আমাদের প্রত‍্যাশাকে সীমাবদ্ধ করলে হবেনা। জুলাইয়ের অঙ্গীকার হতে হবে নিজেদের ভেতরকার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বিরুদ্ধেও। আমাদের নিজেদের মধ্য থেকে কেউ যেন ফ‍্যাসিবাদী আচরণে অভ্যস্ত না হয় সে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তিনি বলেন জানুয়ারিতে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন অঙ্গীকার করেছিলো কেউ কাউকে হেয় করে কথা বলবে না। কিন্তু ইদানিং একে অপরকে ‘চরের দল’ এবং ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’ বলে হেয় করে কথা বলেছেন। বিএনপি জামায়াতকে ‘রাজাকার’ জামায়াত বিএনপিকে ‘চাঁদাবাজ-দখলদার’ বলে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন। এর ফলে  বিভেদ বাড়ছে ও ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে জনাব মঞ্জু বলেন, জুলাই অভ‍্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দল, সংগঠক ও এক্টিভিস্টদের পরস্পরের প্রতি হেয় করে উস্কানিমূলক কথা বলা বন্ধ করতে হবে। গোপালগঞ্জে ফ‍্যাসিবাদী আওয়ামী-ছাত্রলীগের গণতন্ত্র বিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গুলি ও ৪ জন নিরীহ নাগরিক হত‍্যাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি এর তীব্র সমালোচনা করেন।

পথসভায় ব‍্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, উত্তরাসহ দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়ে লাখে লাখে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে শ্লোগান তুলেছিল ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারও বাপের না’। তিনি বলেন এ শ্লোগানের মর্ম আমরা যেন কেউ ভুলে না যাই। লাল সবুজের পতাকাকে বাঁচিয়ে রাখবার জন‍্য দিল্লীর আধিপত্যের বিরুদ্ধে শহীদেরা জীবন দিয়েছেন, এটা সবসময় আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।

নানা অবয়বে আওয়ামীলীগের পুণর্বাসন প্রচেষ্টার তীব্র সমলোচনা করে তিনি বলেন শহীদের রক্ত ও প্রত্যাশার সাথে বেঈমানীর কোন পদক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না। অতীতের মত এখনো মাদ্রাসা, শিক্ষার্থী ও আলেম ওলামাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার যে প্রচেষ্টা সেটারও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন যাত্রাবাড়ীর প্রতিরোধ সংগ্রামে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও বাড্ডা-উত্তরায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবদান সারাদেশে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। গোপালগঞ্জে আওয়ামীলীগের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণকে আগের মত ফ‍্যাসিবাদী আস্ফালন উল্লেখ করে তিনি বলেন এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রতীকী কফিনবাহী রোড মার্চে আরও অংশগ্রহণ করেন এবি পার্টির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আব্দুর রহমান, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, আব্দুল হালিম খোকন, উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুবপার্টির দফতর সম্পাদক আমানুল্লাহ সরকার রাসেল, ছাত্রপক্ষের সাধারণ সম্পাদক রাফিউর রহমান ফাত্তাহ, গণপরিহন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, সহকারী নারী বিষয়ক সম্পাদক শাহীনুর আক্তার শীলা, আমেনা বেগম, সহকারী প্রচার সম্পাদক আাজাদুল ইসলাম, সহকারী স্বেচ্ছাসেবা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, কেফায়েত হোসেন তানভীর, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, পল্টন থানা আহবায়ক মুন্সি আব্দুল কাদের, যাত্রাবাড়ী থানা আহবায়ক আরিফ সুলতান, সদস্য সচিব নাসিমুল ইসলাম অন্তর, মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ কবির, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল সহ কেন্দ্রীয়, মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, যুবপার্টি ও ছাত্রপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।