জুলাই সনদ রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে খসড়ার একটি সারসংক্ষেপ

রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫

     ।।  ড.নাছিমা ইসলাম চৌধুরী বৃষ্টি ।। 

জুলাই সনদের এই খসড়া মূলত রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে একটি নতুন কাঠামো প্রস্তাব করছে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ করা হচ্ছে, একই সঙ্গে জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া

খসড়ায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। এটি একটি ইতিবাচক ধারা, কারণ এতে রাষ্ট্রপতির ওপর আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। দুই কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করতে হবে – যা প্রমাণ করে, অপসারণ প্রক্রিয়া খুবই গুরুতর এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তা করা যাবে না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

রাষ্ট্রপতিকে দুই কক্ষের (উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ) সদস্যদের গোপন ভোটে নির্বাচিত করার প্রস্তাব গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। এতে সংসদের প্রতিনিধিত্বশীলতা বাড়বে এবং রাষ্ট্রপতি সরাসরি দলীয় পদে থেকে নির্বাচনে আসতে পারবেন না – এই নিয়মটি রাষ্ট্রপতির নিরপেক্ষতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতিকে কিছু স্বাধীন নিয়োগ ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে – যেমন মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভৃতি। এটি ভালো উদ্যোগ, কারণ এসব প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। তবে শঙ্কার জায়গা হলো, অতিরিক্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কার্যকর চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকতে হবে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা সংবিধানে আগে থেকেই আছে, তবে এখানে বলা হয়েছে যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের মতামত নেওয়া হবে। এটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা যদি ভুক্তভোগীর সম্মতি ছাড়া দেওয়া হয়, তবে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

জুলাই সনদের খসড়াটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক কাঠামো তৈরির চেষ্টা করেছে। এতে একদিকে রাষ্ট্রপতিকে শক্তিশালী করা হয়েছে, অন্যদিকে জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে—
• দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখা,
• প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা,
• এবং ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা।

এই সনদ যদি আন্তরিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশে একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।

বিএনপি-র সানন্দ্য/সংযত অবস্থান

BNP মোটামুটি সমর্থন জানাচ্ছে খসড়ার সার্বিক কাঠামোর প্রতি, বিশেষত যেখানে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে। তবে, তারা স্পষ্টভাবে চায় না এতে আইনগত বরাবর সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি হোক; বরং রাষ্ট্রীয় স্তরে এক ধরনের গৌরবান্বিত স্বীকৃতি তাদের লক্ষ‍্য। এটা একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ বলা যেতে পারে— একদিকে দূরত্ব বজায় রাখা, অন্যদিকে ঐকমত্যের অংশে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার রাখা।

তবে সংবিধান সংশোধনে প্রবেশ করানো নিয়ে তারা দ্বিমত পোষণ করছে — এই ধারণা থেকে বোঝা যায়, তাদের মনে হতে পারে, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে এটি রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং বা বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু “জাতীয় ঐকমত্য” অংশে সই করতে তারা ইচ্ছুক, যা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ শক্তি যোগাবে।

 

লেখক পরিচিতি : ড. নাছিমা ইসলাম চৌধুরী বৃষ্টি
চেয়ারম্যান প্রণিধি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন
ভাইস প্রেসিডেন্ট অব ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ
ফাউন্ডার এন্ড ওনার অটিজম হেল্প বিডি