জাতির সংবাদ ডটকম
বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, দেশে ২০২১ সালে মোট ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২১৪ জন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। আর ২০২১ সালে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় ৩৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যা প্রতি বছর আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৮ দশমিক ৪ জন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এই হার সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ। যদিও মাথাপিছু মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে।
শুধু মোটরসাইকেলই নয় সাইকেল বা রিক্সা চলাচলেও ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দূর্ঘটনা ছাড়াও এইসব বাহন চুরি হচ্ছে হরহামেশাই। কোন উপায়েই হ্রাস করা যাচ্ছে না চুরি এবং দূর্ঘটনার এ হার।
এদিকে এ সমস্যা প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাধান করার লক্ষ্যে কয়েকজন তরুণ উদ্ভাবক মিলে তৈরি করেছেন ‘স্মার্ট বাইক লকার’ এবং ‘অটোমেটিক ইন্ডিকেটর’। এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ফিচার গুলোর মাধ্যমে খব সহজেই বাইসাইকেল কিংবা মটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে। এছাড়াও স্মার্ট বাইক লকারের মাধ্যমে চুরিও রোধ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন তারা।
এই অ্যাপস দুটি উদ্ভাবনে কাজ করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (সিএসই) শিক্ষক মোঃ রিয়াজুল ইসলাম এবং একই বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ওয়াদুদ। প্রযুক্তিনির্ভর এ অ্যাপসটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী অর্প মজুমদার, লাবণ্য আহমেদ এবং ইমতিয়াজ আহমেদ। এছাড়াও প্রজেক্টটি তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান এবং সি.এস.ই বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুর রহমান সহযোগিতা করেছেন।
এই প্রযুক্তি দুটোতে যে সুবিধা গুলো রয়েছে, তা হলো:
অটোমেটিক ইন্ডিকেটর ব্যাবহারের মাধ্যমে চালক যদি বাইকটিকে টার্ন লেফট বলে, তাহলে ডান পাশের ইন্ডিকেটরটি জ্বলবে। আবার চালক টার্ন রাইট বললে ডান দিকের ইন্ডিকেটর জ্বলে উঠবে। এখানে মেশিন টু মেশিন আর্কিটেকচার ব্যবহার করে কাজটি করা হয়েছে বলে জানান রিয়াজুল ইসলাম।
এই অ্যাপসে আরেকটি ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি হলো ‘ভয়েস কমান্ড’। বাইসাইকেল চালানো অবস্থায় চালক যখন টার্ন রাইট বলবে, তখন ডান পাশের ইন্ডিকেটরটি চালু হয়ে যাবে। আবার টার্ন লেফট বললে বাম দিকের ইনডিকেটরটি চালু হয়ে যাবে। এছাড়াও এখানে আরেকটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো- বাইকটি যদি ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলে এবং হঠাৎ করে যদি ৫ বা ১০ কি.মি বেগে চলে আসে, তাহলে দুটি ইন্ডিকেটরই জ্বলে উঠবে এবং সেখানে “স্টপ” লেখাটি চলে আসবে।
অন্যদিকে স্মার্ট বাইক লকারের মাধ্যমে বাইসাইকেল, রিক্সা কিংবা মটরসাইকেল আধুনিক প্রদ্ধতিতে সহজেই তালা দিয়ে রাখা সম্ভব হবে। কেউ যদি তালা দেওয়া অবস্থায় সেই গাড়ী স্পর্শ করে, তাহলে চালক তথা মালিকের মোবাইলে সাথে সাথে নোটিফিকেশন চলে যাবে। এর ফলে গাড়ীর নিদ্দিষ্ট অবস্থান খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া গাড়ীর ইঞ্জিন স্মার্ট লকারের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘এই অ্যাপসের মাধ্যমে আমরা গাড়ীর ইঞ্জিনটাকে পুরোপুরি ডিসকানেক্ট করে দিতে পারবো, যার ফলে কোন ভাবেই আর ইঞ্জিনটাকে সচল করা সম্ভব হবে না। এভাবে খুব সহজেই আমরা সড়কপথের ঝুকি, মৃত্যুহার এবং চুরি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারবো। সর্বোপরী সরকারী এবং বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মানব উন্নয়ন মূলক সমস্যা সমাধানের এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে এবং দেশকে আধুনিক সোনার বাংলায় রূপান্তর বাস্তবায়ন হবে।’
এছাড়াও রিয়াজুল ইসলাম দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন বাস্তবমুখী সমস্যা সমাধানে নিরলস গবেষনা করে যাচ্ছেন। তার উল্লেখযোগ্য গবেষনা গুলোর মধ্যে রয়েছে-
এম. এল এমবেডেড আই.ও.টি বেজ স্মার্ট এগ্রিকালচার (কৃষকের মুখে হাসী) শিরোনামের গবেষণা প্রজেক্ট রয়েছে। ডিভাইসের মাধ্যমে জমির উর্বরতা পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী প্রয়োগকৃত সারের নাম ও পরিমাণ এবং সম্ভাব্য উচ্চ উৎপাদনশীল ফসলের তালিকা নির্ণয় করা যায়। জমিতে উৎপাদনকালীন সময়ে প্রয়োগকৃত সার এবং ট্রিটমেন্ট ডেটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
অটোমেটিক ওয়াটার পাম্প কন্ট্রোলার (আর হবে না ওভারফ্লো, মোটর থাকবে সুরক্ষিত) শিরোনামে গবেষণা প্রজেক্টে মোটর অটোমেটিক অন/অফের পাশাপাশি রয়েছে রিজার্ভ ট্যাঙ্ক চেকার, ফিউজ প্রটেকশন, টাইমার অন/অফ এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যেকোন জায়গা থেকে মোটর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা।
‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অনাকাঙ্খিত স্পর্শ ও অপহরন থেকে বাচাবে স্মার্ট পোশাক’ এই শিরোনামের গবেষনা প্রজেক্ট রয়েছে। স্পর্শ সেনসেটিভ সেনসর যার মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত স্পর্শ সনাক্ত করে মোবাইল অ্যাপে তার নিকট আত্মীয় এবং নিকটস্থ ৩টি পুলিশ স্টেশনে লাইভ লোকেশন সহ এস.এম.এস যাবে। যার মাধ্যমে অতি সহজে অপহরনকালী ও ভিক্টিমকে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে।