৫ দফা দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি সিলেট মহানগরের স্মারকলিপি

বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৫

 

শহীদ আহমদ খান।। 

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারিসহ ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বরাবরে স্মারকলিপি প্রধান করেছেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি সিলেট মহানগরের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম এর পক্ষে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার সিলেট জেলার উপপরিচালক (উপসচিব) সুবর্ণা সরকার।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহা সচিব ও সিলেট মহানগরের আমির মাওলানা মুজাম্মিল হক তালুকদার, সিলেট মহানগরের উপদেষ্টা মাওলানা আবু ইউসূফ চৌধুরী, সেক্রেটারি জুবায়ের আহমদ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফখরুজ্জামান, অর্থ সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের, দপ্তর সম্পাদক হাফিজ মৌলানা শাহেল আহমদ প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়- ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপনার নেতৃত্ব অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে কতিপয় রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধ ও গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে “ডকট্রিন অব নেসেসিটি” হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পাটি অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ইতিমধ্যে সরকারের কাছে লিখিতভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ এবং ৯০% মানুষ মুসলমান। নাচ, গান এসব আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি শরিয়ত বিরোধী। তাই জাতীয় স্বার্থে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ, গানের শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে একজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া অতীব জরুরী। স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়- বিগত সরকার বিভিন্ন স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদি পদক্ষেণের মাধ্যমে সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের উপর জুলুম-নির্যাতন, মামলা হামলা, জেল-জরিমানা, গুম, খুন করে দেশপ্রেমিক কণ্ঠকে স্তমিত করতে চেয়েছে। দিনের ভোট রাতে নিয়ে নির্বাচনের নামে জাতীর সাথে প্রহসন করেছে। আর এ সমস্ত অবৈধ কার্যক্রমগুলোকে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল শুধু প্রকাশ্যে সমর্থনই দেয় নাই বরং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই স্বৈরচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে জনগণ জোর দারি জানিয়ে আসছে। আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ সেপ্টেম্বর মাসে ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ, বিক্ষোভ ও গণসংযোগ করেছে। এ সমস্ত কর্মসূচীতে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ৫ দফা দাবিসমূহ: আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের উপর গণভোট আয়োজন করা। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ গানের শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে একজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শাক্ষ্য সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। শাপলা হত্যাকান্ড সহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, উল্লেখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়িত হলে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে যা বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় আসীন করবে। তাই আমরা জনগণের পক্ষে উপরোক্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।