
শহীদ আহমদ খান।।
সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি, শাহপরান থানা কমিটির সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট শাহপরান থানা কমিটির সহ-সভাপতি মো. জালাল মিয়ার মৃত্যুতে ১৫ অক্টোবর বিকেল ৫টায় ইসলামপুর (মেজরটিলা) বাজারে শোকসভা পালিত হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি মো. ছাদেক মিয়ার সভাপতিত্বে এবং শাহপরান থানা কমিটির সভাপতি জয়নাল মিয়া’র পরিচালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা রজত বিশ্বাস ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায়।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবুল ফজল, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার, বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশন (রেজি: নং বি-২২০০) এর সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা রুহুল আমিন, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা আহবায়ক শুভ আজাদ শান্ত, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সিলেট জেলা আহবায়ক মিনারা বেগম, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট শাহপরাণ থানা কমিটির যুগ্ন সম্পাদক আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ন সম্পাদক রমজান আলী পটু, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইমদাদুল হক ইমন, জাতীয় সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা আনু মিয়া, সহ-সভাপতি আলমাছ মিয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান আলী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুনু মিয়া সাগর, বন্দর বাজার আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক সুনু মিয়া।
নেতৃবৃন্দ বলেন সহজ সরল ব্যবহারের কারণে মো. জালাল মিয়া সহজেই শ্রমিকদের সাথে মিশতে পারতেন। হোটেল শ্রমিকদের মে দিবসে ছুটির আন্দোলন, রমজান মাসে শ্রমিক ছাঁটাই ও বেতন বোনাসের আন্দোলন, চা শ্রমিকদের আন্দোলনে উনার ভ‚মিকা পালন ও বিশেষত ১লা মে হোটেল শ্রমিকদের খানা-দানা বেতন সহ মে দিবসের আন্দোলন সংগ্রামে তার উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা ছিল। সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে শ্রমিকদের স্বার্থে ন্যায়সংগত ও আইনগত দাবি ও অধিকার বাস্তবায়নে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। সংগঠনের বিকাশের ধারায় নানান সময় মালিক-সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের শিকার হতে হয়। জালাল মিয়া এসকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ভূমিকা পালন এবং সকল প্রকার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। হোটেল শ্রমিকদের শোষণ বঞ্চনা থেকে পরিত্রাণ এবং শ্রম আইন কার্যকর করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করলেও এখনো পর্যন্ত মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছে না। শ্রম আইনে শ্রমিকদের কর্মরত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মালিকরা তা প্রদান করছেন না।
নেতৃবৃন্দ বলেন জালাল মিয়া এমন সময় মৃত্যুবরণ করেন যখন পুঁজিবাদের অসম বিকাশের নিয়ম অনুযায়ী পুঁজি ও শক্তির অনুপাত পরিবর্তিত হওয়ায় বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ সংগঠিত হচ্ছে। ভ‚রাজনৈতিক ও রণনীতি গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সাম্রাজ্যবাদী চীন ও রাশিয়ার আধিপত্য, প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্ব›িদ্বতা তীব্রতর হয়ে চলেছে। এতদ্বঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক শক্তি নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী ভারতের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতকে নিজ নিজ পক্ষে কাজে লাগাতে তৎপর। ভারত সরকার স্বীয় লক্ষ্যে বাংলাদেশে তার অবস্থান জোরদার করতে তৎপর। এর প্রতিফলন ঘটে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মুদ্রাস্ফীতি-মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের মদদে মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিরা অস্বাভাবিকভাবে চাল-ডাল, তেল-লবন, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি শ্রমিক-কৃষক, মেহনতি জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে জীবন জীবিকা আরো সংকটগ্রস্থ ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট সেক্টরে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এদের উপর তাদের পরিবারসমূহের জীবন-জীবিকাও নির্বাহ করে। ফলে দেশের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে জাতীয় উৎপাদনশীলতা ও জাতীয় জীবনে গভীর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে। অথচ হোটেল রেস্টুরেন্ট সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা শ্রম আইনের সুবিধা হতে বঞ্চিত হলে এবং এ সেক্টরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তৈরি করতে না পারলে এ সেক্টর বিনিয়োগের অগ্রাধিকার থেকে ছিটকে পড়ার আশংকা রয়েছে। তাই জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিবেচনা থেকেও হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান তথা শ্রম আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দরিদ্র জনগণ সহায় সম্বল বিক্রি করে, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক কিনে যখন আতœকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তখন কখনো যানজট, কখনো দূর্ঘটনা, বিদ্যুত অপচয়ের অজুহাত তুলে এই বাহনগুলো উচ্ছেদ অভিযান চলে। শহরে অবৈধ ও যত্রযত্র পার্কিং বন্ধ, সড়কের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, রিকশা শ্রমিকদের জন্য স্ট্যান্ড নির্ধারণ করে দিলে যানজট অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে এবং নিরীহ রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবিকার উপর খড়গ হস্ত হতে হবে না।
উল্লেখ্য যে তিনি গত ১ অক্টোবর রাত ১০টায় হৃৎক্রিয়াজনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে যান।