ASSET প্রকল্পে ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগ ‎ঋণের টাকা পড়ে আছে অলস, সরকার দিচ্ছে সুদ

সোমবার, নভেম্বর ৩, ২০২৫


‎নিজস্ব প্রতিবেদক:

‎বাংলাদেশের তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের যোগ্য করে তুলতে ২০২১ সালে শুরু হয় “ASSET প্রকল্প”, যার মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান Institutional Development Grant (IDG)- যার জন্য বরাদ্দ প্রায় ১১৭০ কোটি টাকা।

‎তবে প্রকল্পের এই অংশে ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র জানায়, অর্থ ব্যবহার কম হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে এবং সরকারকে অব্যবহৃত ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

‎প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ২২০টি প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে IDG অনুদানের আওতায় আনা। বাস্তবে এখন পর্যন্ত ১৭২টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ব্যয়ের হারও তুলনামূলকভাবে কম- এ পর্যন্ত ব্যবহৃত অর্থ মাত্র ৪৮.৪১ কোটি টাকা।

‎অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৪০০ কোটি টাকা ঋণ ছাড় করা হলেও ব্যয়ের হার ০–৫ শতাংশের মধ্যে। ফলে অব্যবহৃত অর্থের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে, যা জনগণের করের অর্থ থেকে মেটানো হচ্ছে।

‎সূত্রগুলোর দাবি, প্রকল্পের কিছু কর্মকর্তা- বিশেষত ডেপুটি প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হাসান-এর বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। তারা বলছেন, এতে একটি “সিন্ডিকেট” তৈরি হয়েছে, যা প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও বিলম্ব ঘটাচ্ছে।

‎অন্যদিকে প্রকল্পের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিটে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতাও কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে এবং Annual Procurement Plan (APP) সংক্রান্ত বিষয়ে বারবার তথ্য চাওয়াকে কিছু কর্মকর্তা “হয়রানি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

‎তবে প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও অর্থ ছাড়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই বিলম্ব হচ্ছে। এতে ইচ্ছাকৃত অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়।

‎IDG অংশে কর্মরত কর্মকর্তা ও কনসালটেন্টদের মধ্যে সমন্বয় ঘাটতির কথাও শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, গত তিন বছরে কনসালটেন্টদের মাসিক সম্মানির পরিমাণ প্রায় এক কোটি আশি লাখ টাকা, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হয়নি। বর্তমানে IDG অংশের সামগ্রিক অগ্রগতি ২-৩ শতাংশের বেশি নয়।

‎বিশ্লেষকদের মতে, দায়িত্বহীনতা, দুর্বল তদারকি ও ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকল্পের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের পরামর্শ-এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, যেমন কর্মকর্তাদের পুনর্বিন্যাস, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি—প্রকল্পটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে।

‎প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দিতে রাজি হননি।

‎বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে শুধু ঋণের বোঝা নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যও ব্যাহত হবে।