ডেটা নিরাপত্তায় বড় পদক্ষেপ : দুই অধ্যাদেশ জারি করল সরকার

সোমবার, নভেম্বর ১০, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও মালিকানা নিশ্চিত করতে দুটি যুগান্তকারী অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামের এই আইন দুটির মাধ্যমে এখন থেকে যেকোনো তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা ব্যবহারের আগে নাগরিকের সুস্পষ্ট সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

রোববার (৯ নভেম্বর) সরকার ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে।

নতুন এই দুই অধ্যাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও মালিকানা আইনগতভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিককে তার নিজ তথ্যের প্রকৃত মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, ফলে কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহ বা ব্যবহার করার আগে নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি নিতে বাধ্য থাকবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সংবেদনশীল তথ্য যেমন আর্থিক, স্বাস্থ্য, জেনেটিক ও বায়োমেট্রিক তথ্যের ক্ষেত্রে বাড়তি সুরক্ষা থাকবে। এসব তথ্য ফাঁস বা অপব্যবহার হলে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ, অর্থদণ্ড এবং অন্যান্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

উপাত্তের মালিক নাগরিক নিজেই

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশে নাগরিককে তার তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে। নাগরিক চাইলে তার তথ্য দেখতে, সংশোধন করতে, মুছে ফেলতে বা নিজের তথ্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্তে বাধা দিতে পারবেন।

শিশু ও সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা

শিশুদের তথ্য সংগ্রহে অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিশুদের অনলাইন ট্র্যাকিং বা বিজ্ঞাপনভিত্তিক প্রোফাইলিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষ গঠন

অধ্যাদেশে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় উপাত্ত কর্তৃপক্ষ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষ তথ্য ব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগ, তদারকি ও অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বে থাকবে। একই সঙ্গে দেশের সব সফটওয়্যার সোর্সকোড রাষ্ট্রীয় রেপোজিটরিতে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমে।

নিরাপদ ডেটা বিনিময় প্ল্যাটফর্ম

তথ্য বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠন করা হচ্ছে ন্যাশনাল রেসপন্সিবল ডেটা এক্সচেঞ্জ (NRDEX)। এর মাধ্যমে অনুমোদিত সংস্থাগুলো ন্যূনতম তথ্য ব্যবহার করে পরস্পরের মধ্যে ডেটা বিনিময় করতে পারবে।

একক ডিজিটাল পরিচয়

নাগরিকদের জন্য চালু হতে যাচ্ছে একক ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে একটি পরিচয় দিয়েই সব সরকারি ও ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

বিশ্বমানের সুরক্ষা নীতি

বিশ্বব্যাপী তথ্য সুরক্ষা নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা এই অধ্যাদেশগুলো বিনিয়োগবান্ধব এবং মানবাধিকারসম্মত। সরকারের আশা, এর ফলে অনলাইন বাণিজ্য, ক্লাউড কম্পিউটিং ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সহযোগিতা সহজ হবে এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর আরও গতিশীল হবে।