মাধবপুরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ‘সিন্ডিকেট: বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থবির

শুক্রবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৫

 

ত্রিপুরারী দেবনাথ তিপু, হবিগঞ্জ।।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এমপিওভুক্ত হাইস্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে বছরের পর বছর পদ দখল করে রেখেছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক প্রশাসন ও শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, উপজেলার কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নাদিরা বেগম, মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সালমা আক্তার এবং তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আলমাস উদ্দিন বিধিবহির্ভূতভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয়দের দাবি, এসব বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে মাসিক মাশওয়ারা দিয়ে পদে বহাল থাকছেন এবং এডহক কমিটিকে প্রভাবিত করে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আটকে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি বাঘাসুরা ইউনিয়নের কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলার শিকার হন স্থানীয় সাংবাদিক পবিত্র দেবনাথ। তিনি অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে পদ দখল ধরে রাখতে প্রধান শিক্ষিকা ও সহযোগীরা তাকে ঘিরে মব তৈরি করেন, জোরপূর্বক তার মোবাইল ফোন থেকে ঘুষ সংক্রান্ত রেকর্ডিং মুছে ফেলেন এবং তাকে অপদস্থ করেন।

পবিত্র দেবনাথ আরও জানান, শুধু কালিকাপুর নয়, উপজেলার আরও অনেক বিদ্যালয়ই একই সিন্ডিকেটের প্রভাবে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকবিহীন অবস্থায় চলছে। তার দাবি, কালিকাপুরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নিয়মিত শিক্ষা কর্মকর্তাকে মাসিক ২ হাজার টাকা দেন বলে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে। এবিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাদিরা বেগমকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সালমা আক্তারের বিষয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ বলেন, প্রধান শিক্ষিকা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দায়িত্বে টিকে আছেন। ফলে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না, শিক্ষার মানও পর্যুদস্ত।”
এবিষয়ে মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার বলেন,আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং স্কুলের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে আছি তাই ২০২০ সালের আগস্ট থেকে বর্তমান পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছি। যদি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা, জেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয় আমার কোনো আপত্তি নেই।

তালিবপুর আহ্ছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও চলছে একই অবস্থা। সেখানে আলমাস উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আলমাস উদ্দিনকে একাধিক বার ফোন দিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি মিহির চন্দ্র দেব নামে একজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট’-এর চাপে তার যোগদান স্থগিত থাকে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।

মাধবপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ইকরাম বলেন,বিদ্যালয়গুলো টেকসইভাবে পরিচালনা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ এখন জরুরি। সিন্ডিকেট ভেঙে সঠিক প্রক্রিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২০২১ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় অন্য কাউকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান করা যাবে না।
কেউ ছয় মাসের বেশি টানা ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
ছয় মাসের মধ্যে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হলে জ্যেষ্ঠ তিন শিক্ষকের একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে।একবার দায়িত্ব পালনের পর পরবর্তী এক বছর পুনরায় ভারপ্রাপ্ত করা যাবে না।
অভিভাবকরা বলছেন, এসব বিধি বহু বছর ধরে উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক শূন্য থাকা ও অযৌক্তিকভাবে ভারপ্রাপ্তদের বহাল রাখার ফলে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানও পড়ছে নিচের দিকে।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন,বিনা প্রমাণে অভিযোগ করা ঠিক নয়। সাংবাদিকদের মাধ্যমে যে বিষয়গুলো এসেছে, মন্ত্রণালয় তা খতিয়ে দেখবে।

হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদা নাজনীনকে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।