আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সমর্থন চাইলেন নৌ উপদেষ্টা

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: লন্ডনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার (আইএমও) ৩৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বৈশ্বিক নৌপরিবহন সেক্টরে বাংলাদেশের অবদান ও সাম্প্রতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

সোমবার লন্ডনে আয়োজিত আইএমওর ৩৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে উপদেষ্টা সদস্য দেশগুলোর কাছে এ সমর্থন চান।

মঙ্গলবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বের ১৭৬টি সদস্য দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা আগামী দুই বছরের জন্য ৪০ সদস্যের কাউন্সিল নির্বাচন। এতে বাংলাদেশ ‘সি’ ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতার কথা উল্লেখ করে ১৭৫টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জাহাজ রিসাইক্লিং ও নির্মাণ এবং নৌবাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্য এবং বিশ্বমানের নৌ প্রশিক্ষণের স্বীকৃতি তুলে ধরেন। বাংলাদেশ এরই মধ্যে দ্বীপ রাষ্ট্রসহ স্বল্পোন্নত দেশের নাবিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সহযোগিতার আওতায় প্রতি বছর ১০টি বৃত্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা আইএমওর সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বৈশ্বিক নৌপরিবহন খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদান ও সাম্প্রতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি উদ্বোধনী অধিবেশনে তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ একটি সমুদ্রনির্ভর জাতি, যার পরিচয় ও ভবিষ্যৎ গভীরভাবে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত। গত এক দশকে বাংলাদেশ একটি উপকূলীয় অর্থনীতি থেকে উদীয়মান মেরিটাইম জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে- যেখানে আধুনিকায়ন, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়ন পথনির্দেশ করছে।

উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান তিন সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রার দ্রুত ডিজিটালাইজেশন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এখন নির্মাণাধীন, যা দক্ষিণ এশিয়াকে বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করবে।

আইএমওর সঙ্গে দীর্ঘ ও গঠনমূলক অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বাংলাদেশ আইএমওর বিভিন্ন কমিটি, বিশেষ করে সাব কমিটি অন ইমপ্লিমেন্টেশন অব আইএমও ইন্সট্রাকশনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে ন্যায্য, স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল বৈশ্বিক সামুদ্রিক বিধিমালা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে।

উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দেন, আইএমও কাউন্সিলে পুনর্নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল সামুদ্রিক দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি ও অর্থায়নে ন্যায্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করবে, নাবিক ও মেরিটাইম খাতে পেশাগত প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এগিয়ে নেবে, জলবায়ু-সহনশীল ও লো-কার্বন শিপিংকে সমর্থন করবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আইএমও গঠনে নেতৃত্ব দেবে, যেখানে বড়ছোট সব সদস্য রাষ্ট্র সমান সুযোগ পাবে।

অধিবেশন চলাকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা পাকিস্তান ও বেলিজের মন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে চট্টগ্রাম ও করাচি বন্দরের মধ্যে নৌবাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। উপদেষ্টা পাকিস্তানের মেরিটাইম-বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ জুনায়েদ আনোয়ারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পাকিস্তানের মন্ত্রীও নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। উভয় পক্ষ নৌপরিবহন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে।

লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম ও নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মো. শফিউল বারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অধিবেশনে অংশ নেন।