স্টাফ রিপোর্টার :
বগুড়া আফাফু কোল্ড স্টোরেজের এমডি এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী উপস্থিতি দেখিয়ে বোর্ড সভার রেজুলেশনে জাল স্বাক্ষর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা উপেক্ষা করে ইসলামী ব্যাংক বগুড়া বড়গোলা শাখা ৩৮ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিলের চক্রান্তে বগুড়া আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে । এই ঘটনায় ইসলামী ব্যাংক পিএলসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আফাকু কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া সম্বনিত জেলা কার্যালয়কে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নে অবস্থিত আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড-কে কেন্দ্র করে এই ঘটনায় বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়কে অতিদ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৩৮ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি ও পুনঃতফসিলের অপচেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগে গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ মিল্লাত হোসেন নামের এক ব্যক্তি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার নথিপত্র ও প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত বিষয়টির গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বিবেচনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের বগুড়া কার্যালয়কে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্রে জানাগেছে,
২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট আফাকু কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুলাই গণহত্যার ৯ মামলার আসামি এবিএম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তার স্ত্রী ইসমত আরা লাইজু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন।
কিন্তু পরবর্তীতে ০১/১২/২০২৪ তারিখে ব্যাংকে জমা দেওয়া বোর্ড রেজুলেশনে শিবগঞ্জ উপজেলার কিচকে অবস্থিত আফাকু কোল্ড স্টোরেজের অফিসে উপস্থিত থেকে সভায় অংশগ্রহণ ও স্বাক্ষরের তথ্য দেখানো হয়।
এসব নথি যাচাই করে পুলিশের বিশেষ শাখার অনুসন্ধানে স্বাক্ষর জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যা এসবি’র প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঋণের পরিমাণ ও পুনঃতফসিল
ইসলামী ব্যাংক বড়গোলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডকে ২২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, যা সুদ ও মুনাফাসহ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ চিঠিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ছয়বার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পেয়েছে। তবে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা হয়েছে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত লাভজনক প্রতিষ্ঠান নীতি সহায়তার আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়।
এছাড়াও জালিয়াতির অভিযোগ উঠলেও নীতি সহায়তা সুবিধা পাবে না এবং সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ হলেই এ ঋণ পুনঃতফসিল বিবেচনা করে নীতি সহায়তা কমিটি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা অনুসরণ না করেই সংশ্লিষ্ট মহলের বিরুদ্ধে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও পলাতক এমডির তথ্য লিখিতভাবে জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে বরং এসব তথ্য উপেক্ষা করে পুনঃতফসিলের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
আদালতে মামলা আসামিরা হলেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান
ড. এম জুবায়দুর রহমান, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
মোঃ ওমর ফারুক খান, ইনচার্জ (সিআইডি ২)
মাহমুদ হোসেন খান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক
মোহাম্মদ সৈয়দ উল্লাহ, বগুড়ার জোনাল ইনচার্জ
সিকদার শাহাবুদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও পরিচালক ( বিআরপিডি)
বায়োজিত সরকার, আফাফু কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যান
মাহমুদুর রহমান।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক জোনাল প্রধান সিকদার শাহাবুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে এখনও অবহিত নই। আর কোন তথ্যের
প্রয়োজন হলে হেড অফিসে যোগাযোগ করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বলেন, আদালতের আদেশের কপি পেয়েছি। এবিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে, অনৈতিক ও অবৈধভাবে ঋণ পুনঃতফসিলের চেষ্টার তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ৩৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ থাকা সত্ত্বেও বিদেশে পলাতক ও একাধিক মামলার আসামিকে পুনরায় সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগে জনমনে তীব্র প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যেখানে ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের প্রয়োজন, সেখানে কার স্বার্থে এবং কোন প্রভাবের বলে এমন বিতর্কিত সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।