সুনামগঞ্জের ছাতকে লন্ডন প্রবাসীর বিরুদ্ধে পবিত্র মক্কা-মদিনা অবমাননার অভিযোগ

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের ছাতকে লন্ডন প্রবাসী পীর গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার এক বক্তব্যে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠা করা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ‘দরবার শরীফকে’ পবিত্র মক্কা-মদিনা ও মসজিদের সাথে তুলনা করায় ক্ষোভে ফুসে উঠেছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার সম্প্রতি দাবী করেছেন যে মক্কা-মদিনা ও মসজিদে গিয়ে যে সওয়াব পাওয়া যায় তার সৃষ্টি করা দরবার শরীফে গেলেও সেই পরিমান সওয়াব ও নেকী পাওয়া যাবে। তার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
এদিকে প্রবাসী পীর গিয়াস উদ্দিন তালুকদার কর্তৃক পরিচালিত এই দরবার শরীফে অশ্লীল কার্যক্রম চলে আসছে। তারা ধর্মীয় বিশ্বাস ও অলৌকিক শক্তির মিথ্যা দাবি ব্যবহার করে একটি বাণিজ্যিক প্রতারণা কেন্দ্র হিসেবে এটিকে পরিচালনা করছে।”
অভিযোগের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অংশটি হলো পবিত্র মদিনা শরীফকে অবমাননা করার দাবি। অভিযোগে বলা হয়েছে, কথিত পীর সিয়াস উদ্দিন ভক্তদের সামনে নিজের শারীরিক অবস্থার সঙ্গে পবিত্র মদিনা শরীফের তুলনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন, যা সকল মুসলমানের হৃদয়ে আঘাত হানছে।
অভিযোগকারী এই কার্যকলাপকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “পবিত্র মদিনা শরীফের সাথে পীর সিয়াস উদ্দিন তালুকদার তার শরীরের তুলনা করে বাণিজ্যিক প্রতারণার উদ্দেশ্য হাসিল করছেন। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, মান-সম্মান এবং পবিত্র শরিয়ত অবমাননার সামিল। এই ধরনের কাজ মানসিক ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
অভিযোগে বলা হয়েছে, দরবার শরীফে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পীর সাহেব ও তার স্ত্রী ধর্মীয় অনুশাসন ভঙ্গ করে নারী-পুরুষের সঙ্গে অশ্লীল কাজ, মদ, গাঁজা ইত্যাদি সেবনসহ কুরুচিপূর্ণ কাজ করে চলেছেন। ভক্তদের আকৃষ্ট করার এটি একটি কৌশল। অভিযোগ অনুযায়ী, বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী ‘নজরানা’ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে এবং এই অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগকারী দাবি করেছেন, “আমার বক্তব্য হচ্ছে এগুলি পুরোটাই অর্থ আদায়, যার মাধ্যমে বিদেশী বিবাদীরা বাংলাদেশে এসে অর্থ উপার্জন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।” তিনি বলেন, এই দরবারের কর্মকাÐের কারণে তার মতো অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে।
অভিযোগকারী ইসলাম উদ্দিন দাবি করেছেন, তিনি সহ এলাকার বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ এই বিতর্কিত কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই দরবার শরীফের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ না করা হলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হবে।
তিনি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছন, বিবাদী পীর সিয়াস উদ্দিন তালুকদার ও মাহিমা বেগমের বিরুদ্ধে আইনগত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে তারা এই ধরনের ধর্মবিরোধী ও প্রতারণামূলক কাজ থেকে বিরত থাকেন। অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে এলাকার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। প্রবাসী পীর গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।