নিজস্ব প্রতিনিধি।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে এবার ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। দান সিন্দুকের এসব টাকা গণনা করে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ১৩ ঘন্টা টাকা গণনার পর শনিবার (৬ মে) রাত ৯টায় দানের টাকার এই হিসাব পাওয়া যায়। এবার চার মাস পর দান সিন্দুক খোলা হয়।
বিপুল পরিমাণ এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে অনেক স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি সর্বশেষ যখন দান সিন্দুক খোলা হয়েছিলো, তখন দান সিন্দুক থেকে রেকর্ড ২০ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সেসব টাকা গণনার পর তখনকার সর্বোচ্চ চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। সাধারণত তিন মাস পর পর দান সিন্দুক খোলা হলেও এবার রমজানের কারণে সময় বাড়ানো হয়।
দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার বড় বস্তায় ১৯ বস্তা টাকা হয়েছে। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা।
টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার শতাধিক ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মসজিদ মাদরাসার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তাদের টাকা ভাঁজ করা থেকে শুরু করে গণনা করতে দীর্ঘ ১৩ ঘন্টা সময় লাগে।
এবারও দান সিন্দুকের টাকা গণনার সময় অনেক চিঠি-পত্র পাওয়া গেছে। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ এর তত্ত্বাবধানে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম, হোসেনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাশিতা-তুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. সিরাজুল ইসলাম, শেখ জাবের আহমেদ, মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরিন তারিন ও ফাতেমা-তুজ-জোহরা, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যংকের এজিএম মো. রফিকুল ইসলাম, পাগলা মসজিদ কমিটির সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।
এছাড়া ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ টাকা গণনার কাজ পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা জানান, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এ মসজিদে দান করেন। তাদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির পাশাপাশি মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন।
দানের টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়। এছাড়া ব্যাংকে জমা রাখা টাকার মুনাফা থেকে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ও অসহায় মানুষদের সহায়তাসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়। দিন যতো যাচ্ছে, পাগলা মসজিদে মানুষের দানের পরিমাণ ততো বাড়ছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর খ্যাতি ও যশ।
বর্তমানে ৩.৮৮ একর ভূমির ওপর সম্প্রসারিত পাগলা মসজিদ এলাকায় মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাগলা মসজিদে মুসল্লিদের ব্যাপক সমাগমকে ঘিরে পুরাতন অবকাঠামো ভেঙ্গে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।