আবুল কাশেম জামালপুর প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের ইসলামপুরের পোড়ারচরের সাজু মিয়া- দুলেনা বেগম দম্পত্তি। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ৩ কন্যা সন্তান ও এক ছেলে সন্তান প্রসব করে আলোচনায় আসে এই দম্পত্তি। তবে প্রসবের পরপরই মারা যায় ছেলে সন্তানটি। আগের ৫ সন্তানসহ তাদের সন্তান দাড়ায় ৯জনে। কিন্তু ১৪ এপ্রিল মধ্য রাতে ঘুমের ঘরেই না ফেরার দেশে চলে গেছে তার নারী ছেড়া ধন চার মাস বয়সী সপ্তম সন্তান মারিয়া। মারিয়া মারা যাবার পর থেকেই থেকেই শোকাহত সাজু মিয়া ও দুলেনা বেগম। সন্তান হারানোর দোষ হিসেবে নিজের দারিদ্রতাকেই দুষছেন দুলেনা বেগম।
অশ্রসিক্ত নয়নে দুলেনা বেগম বলেন- “আমাদের অভাবের সংসার। বাচ্চাদের ভালোভাবে যতœ নিতে পারি নাই। কোনো কিছু করতে পারি না। বেশি পুলাপান। ভালো কিছু সংগ্রহ করতে পারি না। খাওয়াতে পারি না ভালো মতো। ভালো মতো লেখাপড়া করাইতে পারি না। চলাফেরা করতে পারি না। আমি কাজ কাম করতে পারি না। এখন বাবুদের নিয়ে কই কাজ করমু? কি করমু? চলার কোনো পথ পায় না।”
এখন সাজু-দুলেনা ঘরে রয়েছে ৫টি কন্যা সন্তান ও ২টি ছেলে সন্তান। বড় কন্যা সন্তানের বয়স ২০ বছর এবং ছোট কন্যা সন্তানের বয়স ৪ মাস। ৭ সন্তানের মধ্যে বড় দুই কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন সাজু মিয়া। এক সময় বেশ ভালো চললেও সাজু মিয়া শারীরকভাবে অসুস্থ থাকার কারনে বেকার থাকায় বাকি পাঁচ সন্তান দিন পার করছেন খেয়ে না খেয়ে।
সাজু মিয়ার চতুর্থ সন্তান রিপন মিয়া বলেন-“আমরা এতগুলো ভাই-বোন। খেয়েও থাকি না খেয়েও থাকি। খুব কষ্টে জীবন কাটায়। অভাবের জন্য লেখাপড়াটাও ঠিকমতো করতে পারি না।”
সাজু-দুলেনার এমন করুন অবস্থা দেখে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। তবে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে সরকারী সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার লোকজন।
প্রতিবেশী আমেনা খাতুন বলেন- “ এই দুনিয়ার মধ্যে আল্লাহ ছাড়া ওগর কিছু নাই। ওরা খুবই গরীব মানুষ। শেখ হাসিনা এতো সাহায্য দিতাছে। এগর কিছু সাহায্য করলে ওরা খুব উপকৃত হইতো।”
আরেক প্রতিবেশী সুজেদা বেগম বলেন- “মাঝে মধ্যে আমরা কিছু দেই। তার শ^শুর বাড়ি থেকে কিছু দে। এইভাবে কি আর দিন চলে। এহন যদি সরকারে কিছু সাহায্য করে তাহলে ওদের সংসার টিকতে পারে।
এদিকে বার বার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করে সাজু মিয়া বলেন- “চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে সাহায্য চাইছি। সাহায্য দেয় নাই। এখন আমি সরকারের কাছে সাহায্য চাই। এই পুলাপান নিয়ে আমি দুই বেলা খায়ে বেচে থাকবো। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ।
সাজু মিয়া আরো বলেন- “আমি অসুস্থ মানুষ। পায়ে ব্যাথা, কানে কম শুনি। আমি কোনো কাজ-কাম করা পাই না। আমার সব ছোট ছোট পুলাপান। দুইটা মেয়ে আমি বিয়ে দিছি। বাকিদের ঠিকমতো খাবারও দিতে পারি না।”
তবে সাজু- দুলেনা দম্পত্তিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু: তানভীর হাসান রুমান বলেন-“ আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে তাদেরকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা দিবো। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ভাতা যেনো তারা পায় সেটার জন্য মাতৃত্ব কার্ড করে দেবার ব্যবস্থা করবো। সরকারের অন্যান্য সহযোগিতার কোনো ব্যবস্থা থাকে, পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উনার জন্য স্থায়ী একটা ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করবো।”