মানুষের সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ দূষন ই অন্যতম সমস্যাগুলোর একটি।
পরিবেশ দূষণ বলতে মূলত পরিবেশের তিনটি উপাদান যথা : বায়ু,পানি ও মাটি এর দূষণকে বোঝায়। তবে শব্দ দূষণ ও বর্তমানে একটি অন্যতম পরিবেশ দূষণ হিসেবে প্রকট হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত দূষণ কী একদিনে ই হতে পারে? না। এই পরিবেশ দূষন মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদী অসচেতনতা ও দায়িত্বহীনতার ফসল।
প্রথমেই কথা বলা যাক বায়ু দূষণ নিয়ে। বায়ু দূষণ বলতে মূলত কী বোঝায়? সহজ ভাষায় যদি বলা হয় তাহলে বিভিন্ন উৎস থেকে আগত ধোয়া ও বর্জ্য যখন বায়ুতে মিশে তখনই মূলত বায়ু দূষণ হয়। এখানে বিভিন্ন উৎস বলতে বিভিন্ন কল–কারখানা,মিল ফ্যাক্টরি,ইটের ভাটা,বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত মিথেন ধোঁয়া,হাসপাতাল,এরকম অনেক উৎসের কথা বলা হচ্ছে এবং এই সমস্ত উৎস থেকে প্রতিনিয়ত বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বর্জ্য ও ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। বায়ু দূষণের কারন মূলত এগুলোর নির্গমন ই। এইসব ধোয়া ও বর্জ্য যখন বায়ুতে মিশে তখন ই বায়ু দূষিত হয়। একটি সূচক থেকে জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরেগুলোর মধ্যে ঢাকা ২য়। সুতরাং বোঝা যায়, ঢাকা তথা সারা বাংলাদেশে বায়ু দূষণ অন্যতম একটি সমস্যা।
বায়ু দূষনের সমাধান কী? কতৃ়পক্ষ ও সাধারন জনগনের সচেতনতা। যারা বিভিন্ন কল কারখানা, ইটের ভাটার দায়িত্বে আছে তাদেরকে এমনভাবে ব্যাবস্থা করতে হবে যাতে এইসব থেকে যে বর্জ্য ও ধোয়া নির্গত হয় সেটাকে যাতে যেকোনভাবে রিসাইকেল করা যায় বা সেগুলো যাতে বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার সুযোগ না পায়। সাধারন জনগনের ও সচেতন হতে হবে তারা যেন বিভিন্ন জেনারেটর বা মোটর চালনা করার মাধ্যমে বা অন্য যেকোনভাবে বায়ুকে দূষিত না করে।
আরেকটি অন্যতম দূষণ হলো পানি দূষণ। পানি দূষণের অন্যতম কারন হলো বিভিন্ন জলজ যান যেমন– জাহাজ, লঞ্চ, ট্রলার, মোটরচালিত নৌকা ইত্যাদি থেকে নির্গত বর্জ্য নদী বা সমুদ্রের পানিতে ফালানো।এছাড়াও বিভিন্ন কল কারখানা যেগুলো নদীর পাড়ে অবস্থিত সেগুলো থেকে ও বর্জ্য নির্গত হয়ে নদীতে পড়ে। আবার কৃষিজমিতে সার বা কীটনাশক ছিটানো হলে সেগুলো ও পানিতে গিয়ে পড়লে পানি দূষণ হতে পারে।
পানি দূষনের সমাধান ও কতৃপক্ষ ও জনগন কে একযোগে নিতে হবে। জলজ যান কতৃপক্ষকে বর্জ্য পানিতে না পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারন জনগনকেও সচেতন হতে হবে যাতে কোনো ধরনের বর্জ্য নদীতে না পড়ে ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, উষ্ণতা বৃদ্ধি এখনই থামাতে না পারলে ২০৩০ সালে আরও শূণ্য দশমিক ছয় ডিগ্রী উষ্ণতা বাড়বে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯৮ ভাগ নিশ্চিত ২০২৭ সালে উষ্ণতা বর্তমান সীমা অতিক্রম করবে, চলতি বছর তাপমাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। পৃথিবীতে ১৮৫০ সাল থেকে উষ্ণতা রেকর্ড শুরুর পর ৮ম উষ্ণতার বছর ছিল ২০১৬ সাল। পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ২০ হেক্টর জমি বন্ধা, মন্দা , ৪৫ হেক্টর উর্বর জমি বালুকাময় এবং প্রতি বছর ৭০ লাখ জমি মরুভূমি হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৮০ সালে সমুদ্রের তল দেশে উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে দেশের মোট আয়তনের এক তৃতীয়াংশ সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাবে এবং কোটি কোটি মানুষকে বাড়ি ঘর ছেড়ে যেতে হবে। গবেষকদের মতে, জলবায়ুর আগ্রাসীর তান্ডবে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ব্রেন স্ট্রোক, হৃদ রোগ, কিডনী সমস্যা, চোখের রোগ, সর্দি, কাশি সহ ৬৩ ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এ দেশের মানুষ।
মাটি দূষণ হলো সবথেকে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে সবচেয়ে বিপদজনক পরিবেশ দূষণ।কারন বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ।মাটি দূষিত হলে ফসল উর্বর করা সম্ভব নয় এবং যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব পড়তে পারে। মাটি দূষণের অন্যতম কারন হলো মাটিতে ইউরিয়া সার ও কীটনাশকের অতিব্যবহার ও প্লাস্টিক–পলিথিন যেখানে সেখানে ফেলা। প্লাস্টিক–পলিথিন পচনযোগ্য নয় যার ফলে এটি দীর্ঘদিন মাটিতে থাকার কারনে মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।মাটি দূষনের সমাধানও কতৃপক্ষ ও দায়িত্বশীল জনগনের একাগ্রতার মাধ্যমেই সম্ভব। কতৃপক্ষের বেশি বেশি সেমিনার ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করে কৃষকদের কীটনাশক ও সারের কম ব্যবহার ও সাধারন জনগনকে যত্রতত্র প্লাস্টিক–পলিথিন না ফেলার আহবান করা উচিত।
শব্দ দূষণ বর্তমানে একটি আতংকে রূপ নিয়েছে ঢাকায়। এর অন্যতম কারন হলো রাস্তায় অতিমাত্রায় যানবাহন চলাচল বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার।এইসব যানবাহনের হর্ন এর কারনে শব্দ দূষণ অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও মাইক–সাউন্ড বক্সে বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ শব্দ দূষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। এইসব এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় অসুস্থ রোগী,শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের।এর একমাত্র সমাধান হলো সড়কে যানবাহন এর মাত্রা কমানো ও এইসব সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ করা।এক্ষেত্রেও কতৃপক্ষ ও জনগনের একত্রে কাজ করা সম্ভব। বিশেষ করে জনগন এক্ষেত্রে ভূমিকা বেশি রাখতে পারে যদি তারা অপ্রয়োজনে সাউন্ড বক্স ব্যবহার না করে।
বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের সমস্যা রয়েছে।কিন্তু সব সমস্যার ই সমাধান রয়েছে।যদি কতৃপক্ষ ও জনগন সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে পরিবেশ দূষণ তথা বায়ু,পানি,মাটি ও শব্দ দূষণের সমাধান করে তবে নিশ্চয়ই একদিন বাংলাদেশ ও হবে পৃথিবীর অন্যতম পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ দূষনমুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি। সেজন্য পরিবেশ রক্ষাকে আমাদের অ্গ্রাধিকার দিতে হবে।
লেখক: এস.এম. ফাতিন, শাদাব দনিয়া কলেজ শিক্ষার্থী।