অবসরের পূর্বেই কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা উত্তোলন সহ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা চৈতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

রবিবার, জুলাই ১৬, ২০২৩

 

 

মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ,মির্জাগঞ্জ।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে অধ্যক্ষ পদে বহাল থাকা অবস্থায় জালিয়াতি করে অবসরের টাকা উত্তোলন সহ চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষের নাম মাওলানা ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরী। তাঁর বাড়ি বিক্রমপুর (মুন্সিগঞ্জ)। তিনি চৈতা নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় কর্মরত। ভুয়া রেজুলেশন ও কাগজপত্র তৈরি করে তিনি নিজেকে পদত্যাগ এবং অন্য একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেখিয়ে তাঁর স্বাক্ষর জাল করে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ১৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করেন।

 

তাঁর দ্বৈত নাটক মঞ্চস্থের চিত্রে দেখা যায়, ১ আগস্ট ২০২২ পদত্যাগ দেখিয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের এবং অবসর সুবিধা বোর্ডে কাগজ জমা দেন। আবার তৎকালীন মাদ্রাসার সভাপতি, এডিসি শিক্ষা ও আইসিটির স্বাক্ষর জাল করে আগস্ট ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে বেতনের টাকাও উত্তোলন করে। তাঁর এই দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা নুর মোহাম্মদ খান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক গত ৭জুলাই কল্যাণ ট্রাস্টে এবং অবসর সুবিধা বোর্ডে লিখিতাকারে অভিযোগ দায়ের করেন।

 

এখানে শেষ নয়। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বাক্ষর জালিয়াতি, চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাদ্রাসায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকার ঘুষ নিয়ে শুধুমাত্র একজনকে চাকরি দিয়েছেন। আবার তাও ভুয়া। যেমন,গত ২০১৫ সালে মাদ্রাসায় মোঃ ছাইদুর রহমান নামে একজন লাইব্রেরীয়ান নিয়োগ করেন। তবে সেটি বাস্তবে নয়,বরঞ্চ ভুয়া। ভুয়া নিয়োগের বিষয়টি জানতে পেরে মোঃ ছাইদুর রহমান বাদি হয়ে আদালতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪১৪/২০।

এরকম প্রায় ত্রিশ জন লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রামপুরা গ্রামের মাহমুদুল হাসান এর নিকট থেকে ৮ লাখ টাকা,বাজিতা ৩য় খণ্ডের মোঃ আবদুস সোবাহান মুন্সীর নিকট থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা,বাকেরগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামের তুহিন হাওলাদারের নিকট থেকে ৩লাখ টাকা,চৈতা গ্রামের মোঃ আমিন খানর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা,লিটন মৃধার নিকট থেকে ২ লাখ টাকা,মাধবখালীর নেছার উদ্দিনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা, কলাগাছিয়ার মোঃ শফিকুল ইসলামের নিকট থেকে ৪ লাখ টাকা,সুবিদখালীর জুয়েলের নিকট থেকে ৪ লাখ টাকা,বাজিতার মোঃ সেলিম মাওলানার নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা, পশ্চিম চৈতার লোটাস মৃধার নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা, মহিষকাটার নুরুল ইসলামের নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা,পটুয়াখালীর লিটনের নিকট থেকে

৩ লাখ টাকা,সাইদুর রহমানের নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে।

ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরী সম্পর্কে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সে মাসের পর মাস ধরে কর্মস্থলে না এসে সরকারি কোষাগার থেকে প্রতি মাসেই বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন। মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিয়ম-নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই তিনি দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেছেন। এমন পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও সাবেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান ওবায়েদুল রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ওসব অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের বেতন-ভাতা বন্ধের নিদের্শও দিয়েছেন।

 

এদিকে এ বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল মালেক বলেন, মাওলানা ওবায়েদুর রহমান বিক্রমপুরী মাসের পর মাস পর্যন্ত মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার লক্ষ্যে শিক্ষক মণ্ডলী ও গভর্নিংবডির সভাপতি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। ইতোমধ্যে,সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে বেতন উত্তোলন, মাসের-পর মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিতসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে তিনটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে আমাদের মামলার প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রেজাউল কবীর বলেন, গভর্নিংবডির সভাপতি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মতামত জানতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোঃ ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।