গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ছাড়া পেশাজীবীরা ঘরে ফিরবে না- পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৩

জাতির সংবাদ ডটকম।।

আমরা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফেরত চাই।গত ১৫ বছর ধরে আমরা অধিকারহীন। আমরা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবনা।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর ) সকালে পাবনা প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে জেলা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ–জেটেবের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে পেশাজীবী নেতারা এসব বলেন।

ইঞ্জিনিয়ার ফজল মেহমুদ ছোটনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি এডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট সেলিম রেজা হাবিব, কেএম আনোয়ারুল ইসলাম,এডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ, ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার এবিএম রুহুল আমিন আকন্দ, ডা. আহমেদ মোস্তফা নোমান, আবদুস সামাদ খান মন্টু,নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা, সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, সাংবাদিক ফকরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার লিটন হোসেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি এডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এখানে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার নেই। যে চেতনাকে ভিত্তি করে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, সেই গণতান্ত্রিক চেতনাসহ জনগণের সকল অধিকার আজ অর্ধশত বছর পরে বর্তমান দখলদার সরকার হরণ করেছে।’

শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীন এই ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে, আমরা একটি পতাকা পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে চেতনাকে ভিত্তি করে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, সেই গণতান্ত্রিক চেতনা বর্তমান দখলদার সরকার হরণ করেছে। জনগণের সব অধিকার হরণ করে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে, বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা করছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, যে গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন যে খালেদা জিয়া, সেই দেশনেত্রীকে আজ অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রের মা আজ জীবন- আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আজ এই মহান দিবসে বলতে বাধ্য হচ্ছি, দেশে গণতন্ত্র নেই। আজ দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এখানে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আমরা শপথ নিচ্ছি- দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।’

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব, কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিবারের জমিদারিতে পরিণত হয়েছে। ওই পরিবার যাই করুক কোনো সমালোচনা করা যাবে না। সমালোচনা করলেই চৌদ্দ শিকের ভাত খেতে হবে। দেশের মালিক নাগরিকদের আজ দাসে পরিণত করা হয়েছে।

দেশে এক ভয়ানক দুঃশাসন চলছে উল্লেখ করে কাদের গনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় মানুষ আজ ন্যায় বিচার বঞ্চিত। অপরাধীরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিবাদকারীরা হচ্ছে জুলুমের শিকার। আজ মানবাধিকার র‍্যাবের তপ্ত বুলেটে ক্ষতবিক্ষত। গণতন্ত্র পুলিশের বুটের তলায় পৃষ্ঠ। মানবতা আজ “আয়নাঘরে” আহাজারি করছে।

পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে বাকস্বাধীনতা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত করা হয়েছে। হরণ করা হয়েছে গণতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রের খোলসের ভেতরে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার আজ মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা, ধর্ষণ সহ্যসীমা ছড়িয়ে গেছে।এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রাতের আঁধারে লুট হয়ে যাওয়া মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। লুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করা। তিনি বলেন
‘দেশ আজ একটি দল ও পরিবারের হাতে জিম্মি। কোথাও কাউকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। স্বাধীন দেশে আজ ভিন্ন মত দমনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের শাসন। আর এই শাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয় মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’-এটাই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মূল শর্ত। দুর্ভাগ্য মানুষ এখন আর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না। এমনকি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটও দিতে পারছে না। আমরা দেখলাম, দিনের ভোট আগের দিন রাতেই হয়ে গেছে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, গণতন্ত্র বলেন, আইনের শাসন বলেন, সুশাসন বলেন, জবাবদিহিতা বলেন-এর সবকিছুই নির্ভর করছে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর। সে অধিকার এখন আর এ দেশের মানুষের নেই, ফ্যাসিস্ট সরকার গায়ের জোরে কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের ন্যুনতম মানদন্ডও মানা হচ্ছে না। তাই সবার আগে লুট হয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার এবং একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজন সরকারি প্রভাবমুক্ত, কারসাজিমুক্ত নির্বাচন। কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানলড়াই করেছেন।