জাতির সংবাদ ডটকম ।।ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসানের দখল-দুর্নীতির ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখিত বিষয়ে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ও দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর জনকল্যাণমূলক কাজে মনোযোগ না দিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে অবৈধ আয়ের উৎসগুলো চিহ্নিত করে। এর মধ্যে রয়েছে: ভূমিদুস্যতা, অবৈধ কাঁচাবাজার, পরিবহন চাঁদাবাজি (লেগুনা/অটোরিক্সা), ডিস-ইন্টারনেট এন্টিনা, ফুটপাতে চাঁদা সংগ্রহ, ডোনেশনের নামে চাঁদাবাজী, পদ বাণিজ্য, সেক্টর কল্যাণ সমিতির নির্বাচন না দিয়ে কমিটি ঘোষণা, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ডেকোরেটরের কাজের টাকা না দেওয়া, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফার্নিচার মার্কেট, স্কুল কালেজ-এ চাঁদাবাজী, জামায়েত প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও অর্থায়ন, বিএনপি জামায়াতের সাথে সিন্ডিকেট করে সিভিল এভিয়েশনের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং ১০০-৫০০ কোটি টাকার কাজ তাদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে ভোগ করা। চাঁদাবাজির অর্থ দিয়ে এমপি হাবিব হাসান কানাডায় ছেলে তানিমের নামে কিনেছেন বিশাল বাড়ি।
ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ;
ভূমিদুস্যতা:
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এর পশ্চিম পাশে বাউনিয়া মৌজা স্থীত, ১১০ বিঘা জমির উপর হাবিব সিটি ঘোষণা। পারিবারিকভাবে ৮ থেকে ১০ বিঘা জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ জমির উপর মাটি ভরাট করে আয়ত্বে নেয়। প্রকৃত জমির মালিক ঐ জমির ধারে-কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। ভুক্তভূগীরা তার সাথে যোগাযোগ করলে, কাঠাপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে উক্ত জমি তার নামে লিখে দেওয়ার প্রস্তাব করে। কেউ বিক্রি করতে আপত্তি জানালে তাকে ভয়-ভীতি, হুমকি ও ব্লাকমেইলিং করার চেষ্টা করে। তার আপন ভাগীনা, তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের-এর সাধারণ সম্পাদক এম ডি হালিম ও তার ভাইদের কাছে থেকে জোর পূর্বক ৬ বিঘা সম্পত্তি ৫ লাখ টাকা কাঠা প্রতিদামে কিনে নেন।
অনেকের কাছ থেকে কমিশন রেজিস্ট্রি নিয়ে নির্ধারিত টাকার অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক টাকা বাকি রেখে রেখে পরবর্তীতে পরিশোধ করবে বলে সময় নেয়, পাওনাদার সময়মত টাকা চাইতে গেলে অপমান অপদস্ত হতে হয়। এছাড়াও তার নানা বাড়ীর আত্মীয় খোরশেদ মাতাব্বরের এক বিঘা সম্পত্তি দখলে রেখেছে। যার মূল্য ১০ কোটি টাকা। বর্তমানে তার সম্পত্তির কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। আরও অনেক ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন। যা তদন্তনাধীন।
এছাড়াও লালবানু, পিতা: নবাব আলী। মজিদা বেগম, পিতা: নবাব আলী। সাং: পাজা, থানা: টঙ্গি, জেলা: গাজিপুর।
উক্ত ভূক্তোভোগীর জমির পরিমাণ ৪৪ শতাংশ, মৌজা বাউনিয়া, দাগ নং- ৫২১৩, তাদের পুরো জমি তিনি দখল করে বালি ভরাট করেছেন। তারা দুই বোন এমপি হাবিবের সাথে যোগাযোগ করলে তাদেরকে ৪ লাখ টাকাতে জমি বিক্রি করার প্রস্তাব করেন। দুই বোন কাঠা প্রতি ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে জমিদিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে আপমান অপদস্ত করে বাসা থেকে বের করে দেন। তার এই ভূমিদস্যুতার কাজে প্রধান সহযোগী/সহকারী নূর হোসেন, যিনি তুরাগ থানা আওয়ামী লীগ-এর অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। এই নূর হোসেনের মাধ্যমে সম্প্রতি মেট্রোরেলের সংলগ্ন মাইলস্ট্রোন কলেজের পিছনে ৭ বিঘা সম্পত্তি যাঁহার মূল্য ৩০০ কোটি টাকা, মাত্র কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে উক্ত সম্পতির মামলা চলমান থাকা অবস্থায় জোরপূর্বক অন্য পক্ষ থেকে নামমাত্র খরিদ করে দখলে নেন। এ ধরনের ভূমি দখলে তারা পারিবারিক ভাবে বহু আগে থেকেই সম্পৃক্ত। যা উত্তরা, তুরাগ সর্বপরি ঢাকা-১৮ আসনের প্রতিটি মানুষ অবহিত। এরুপ দখলবাজির শত শত অভিযোগ হাবিব-হাসান পরিবারের রয়েছে।
* চাঁদা আদায়ের বিভিন্ন খাতঃ
উত্তরা সোনারগাও জনপদ রোড। রাজউকের খালি প্লট-এর ফার্নিচার মার্কেট থেকে প্রতিমাসে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে, যারা এসব চাঁদাবাজী পরিচালনা করে তাদের মধ্যে রয়েছে ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা বিপুল, যুবলীগ নেতা সোহেল।
আব্দুল্লাহপুর মাছ বাজার থেকে প্রতিমাসে ১১ লক্ষ টাকা চাঁদা সংগ্রহ। এই চাঁদাবাজীতে সহযোগীতা করেন মোতালেব কাউন্সিলর।
হাসেম চেয়ারম্যান এর ছেলে নাজমুল এর ১০ নং সেক্টর সংলগ্ন কাঁচা বাজার থেকে এমপি ৩ লাখ, এমপি-এর ভাই সোহেল ১ লাখ এবং এমপির ছেলে তানিম নেয় ১ লাখ।
কামারপাড়া ও আব্দুল্লাহপুর সুইজ গেইট-এর মাঝামাঝি বেরিবাধের পাশের কাঁচা বাজারের মালিক, অত্যন্ত ত্যাগী যুবলীগ নেতা মহিতুর রহমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক উত্তরা পশ্চিম থানা ছাত্রলীগ থেকে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে নগদ ৫০ লাখ টাকা আদায়করে নেন এবং প্রতিমাসে ৪ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
১১ নং সেক্টর মোস্তফা মেম্বারের কাঁচা বাজার মার্কেট থেকে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকা কাউন্সিলর শফিকের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন।
ময়লার মোড়, রবীন্দ্র ইউনিভার্সিটির অপজিট পাশে রাজউকের একটি মামলা চলমান টঙ্গী এলাকার বাসিন্দার মালিকের সাথে তুরাগের নুর হোসেনে মাধ্যমে একটি চুক্তি করে। যাতে উল্লেখ থাকে ভাড়ার অর্ধেক অর্ধেক নেবেন কিন্তু মার্কেট চালু হওয়ার পর থেকে। এমপি নিজেই মূল মালিক ছিলেন।
আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্রমিকলীগ নেতা বেয়াই কপিল ও নুরের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা প্রতিমাসে সংগ্রহ এবং আব্দুল্লাহপুর থেকে চামুরখান পর্যন্ত অটোরিক্সা চলাচল বাবদ প্রতিমাসে নাজমুল ও আকবরের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা নিয়ে থাকে।
হাউজবিল্ডিং থেকে আমির কমপ্লেক্স পর্যন্ত কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেলের মাধ্যমে ফুটপাতের চাঁদা বাবদ প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকা আদায় করে।
আমির কমপ্লেক্স হইতে তার নিজ মার্কেট লতিফ এম্পেরিয়াম রাজলক্ষী, এইচ এম প্লাজার আশেপাশের সকল ফুটপাত থেকে মাসে প্রায় ১৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে।
উত্তর খান ফালুর মার্কেট দখল করে ঐ অঞ্চলের কাউন্সিলর জয়নালের মাধ্যমে প্রতিমাসে ৩ লাখ টাকা ভাড়ার টাকা আদায় করেন।
পদ বাণিজ্য:
গত বছরের ২৬ জুলাই উওরা ফ্রেন্সক্লাব মাঠে ঢাকা-১৮ আসনের সকল থানা, ওয়ার্ড-এর আওয়ামী লীগ-এর ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মলনের দিন কমিটি ঘোষণা না হওয়ার কারণে পদপ্রত্যাশী সকল নেতাকর্মী, স্থানীয় এমপি ও মহানগরের নেতা হিসেবে তাঁর কাছে যোগাযোগ করে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাপক অংকের টাকার বিনিময়ে প্রত্যাশীত পদের নিশ্চয়তা দেন। এভাবে প্রায় ২০ কোটি টাকা গ্রহণ করে।
৫৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কপিল উদ্দিন এবং তার বেয়াই মোস্তফা মাতাব্বরের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ১কোটি ৫০ লাখ টাকা।
১ নং ওয়ার্ড-এর সাবেক আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাউদ্দিন খোকার কাছ থেকে নেন ৫০ লাখ টাকা।
খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম ও মোমেনের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়েছে।
এছাড়াও ১০-৫০ লাখ টাকার উপরে নিয়েছেন আরও ৫০ জন নেতাকর্মীর কাছ থেকে, এদের মধ্যে অনতম, তুরাগের হাজী নাজিমুদ্দিন, লেহাজউদ্দিন ও নুরু মেম্বার অন্যতম। উওরা পশ্চিম থানার কাউন্সিলর শরিফুল, নাসির উদ্দিন, আলতাফ সরকার সাহাবুদ্দিন, প্রিন্স পরিবহন নুরু এবং নাফিজ উদ্দিনসহ অনেকে উত্তরা পূর্ব থানায় কুতুবুদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার বসির, সফিকুল আলম মুক্তা, খান মাহামুদ। জাবেদ সিদ্দিকিকে উত্তরা থানার সভাপতি পদ দেবে বলে বিভিন্ন অজুহাত ও কারণ দেখিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে এসব বিষয় উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী ও দুদকের চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়।
এ বিষয়ে দুদকের একজন উপপরিচালক বলেন, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যদি দুদকের তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।