জাতির সংবাদ ডটকম : ভুঁয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে কোম্পানির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পদ্মা গ্রুপ অব কোম্পানির চার পরিচালকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানার মামলা নং ১৬(১০)২৩ ধারা নং ৪২০/৪০৬/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১দ:বি: মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের মেয়ে পরিচালক নাজিবা নাহিদ খান।
এরপরই আসামীরা মামলা তুলে নিতে বাদীকে নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে।মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে বাদীকে মাদকাসক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণে ষড়যন্ত্র করে আসামীরা। এ বিষয়ে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এরইমধ্যে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন নাজিবা নাহিদ খান।
থানায় করা সাধারণ ডায়রির তথ্য অনুযায়ী, আসামীরা মামলায় জামিন পেয়েই নাজিবা নাহিদ খানকে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে আপোষ করার জন্য হুমকি দেন। তিনি মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় আসামীরা গত ১৮ অক্টোবর ২০২৩ দুপুরে গুলশানের বাসা থেকে নাজিবা নাহিদ খানকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখে মামলা প্রত্যাহার এবং মুচলেকা প্রদান এবং সাদা ষ্টাম্পে ও কয়েকটি কোম্পানীর রেজুলশনে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
এবং মামলার আসামীরা নাজিবা খানের ৮১ বছরের বয়োবৃদ্ধ পিতাকে বাসা হতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে বাদীর ওপর কাগজপত্র সই করতে চাপ প্রয়োগ করে। নানাভাবে মামলার বাদীকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বেশকিছু দলিল ও চেক বইতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এরপর তারা নাজিবা খানকে জোর করে প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিক লিমিটেড নামক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দেয়। পরে তার মা সেখান থেকে মুচলেকা দিয়ে উদ্ধার করেন।
একিই ভাবে বছরের শুরুর দিকে আসামীরা বাদীর বয়োবৃদ্ধ পিতাকে বাসাথেকে উঠিয়ে নিয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বেশকিছু দলিল ও চেক বইতে স্বাক্ষর করিয়ে নেনএবং তাহাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দেয়। পরে নাজিবা নাহিদ খান সেখান থেকে মুচলেকা দিয়ে বাবাকে উদ্ধার করেন।
কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎতে নাজিবা খানের করা মামলার প্রধান আসামীরা জামিন নিয়ে মামলার বাদী নাজিবা নাহীদ খান ও তার মাকে নানা ভাবে হত্যা এবং গুম করার হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের চলাফেরার প্রতি নজরদারি করছেন।
মামলায় পদ্মা গ্রুপের পরিচালক রায়হান হোসেন, পরিচালক (অপারেশন) মো. মুরাদ হোসেন সোহাগ, পরিচালক নাবিলা নাহিদ খান, পরিচালক পারভীন সুলতানা খান বিউটি, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এস্টেট) জিয়াউদ্দিন, জিএম (অর্থ ও হিসাব শাখা) এবং পরিচালক (অর্থ ও প্রকল্প) মনির উদ্দিন। আবু সামাউন সরদার,মুরাদ হোসেন সোহাগের স্ত্রী মনিরা মুরাদ; ভূঁইয়া ফিশিং অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের পরিচালক মোস্তাক ভূঁইয়া, পরিচালক মোবাশ্বের ভূঁইয়া, পরিচালক মো. হাসমত আলী খানকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আনোয়ারুল ইসলাম (জামাল), আব্দুল বাসেত, মো. জামিল আক্তার,ওরফে আবু তৈয়ব (কাজল) মো. ইসমাইল, মো. জহিরুল হক (বিপ্লব) হাসানুল বান্না লাইলীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার নথি অনযায়ী, বাদী নাজিবা নাহিদ খানের ভগ্নিপতি রায়হানের সঙ্গে মিলে আসামীরা চেয়ারম্যান (বাদীর পিতা) এর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে ভূঁইয়া ফিশিং অ্যান্ড সন্স লিমিটেড এবং ফ্রোজেন মানি উত্তোলনের অজুহাতে আত্মসাৎ করে সব নিজের নামে করে নিয়েছে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের কথা বলে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে একটি টাকাও জমা দেয়নি। ফ্রোজেন মানি ওঠানোর কথা বলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ভূঁইয়া ফিশিং অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের মেমোরেন্ডাম অব আর্টিক্যালস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (সংঘ স্মারক) উপস্থাপন করতে বললে শুধু একটি প্যাড দেয় এবং তাতে তাদের নাম ব্যবহার করে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র তৈরি করে বাদীর পিতাকে ভুল বুঝিয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।’
এজাহারে আরও বলা হয়, ওই চুক্তিপত্রের সাক্ষীরা সবাই আসামিদের লোক এবং অপর আসামি মো. জামিল আক্তার ওরফে আবু তৈয়ব ওরফে কাজলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে আসামি আনোয়ারুল ইসলাম জামাল ও আব্দুল বাসেতকে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও টাকা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সময় অফিসে নিয়ে আসেন। তারাও ওই অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তারা আমার বিনিয়োগ করা টাকাসহ অন্যদের বিনিয়োগ করা টাকা পদ্মা গ্রুপ অব কোম্পানির কাছ থেকে ফ্রোজেন মানি উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া কর্মকর্তা জামিল আকতার কাজল ওরফে আবু তৈয়বের নাম ব্যবহার করে পদ্মা গ্রুপ কোম্পানির মতিঝিলের ইউনুস সেন্টারের অফিস থেকে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা মোস্তাক ভূঁইয়া ও মোবাশ্বের ভূঁইয়াদের নাম ব্যবহার করে তাদের প্রতারক চক্রের সদস্য জনৈক কামরুল, ভূঁইয়া ফিশিং অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের পক্ষে পদ্মা গ্রুপের ভাউচারে সই করে ওই টাকা গ্রহণ করেন। একইভাবে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আনোয়ারুল ইসলাম জামাল পদ্মা গ্রুপের ভাউচারে ওই টাকা গ্রহণ করেন এবং ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর মো. মুরাদ হোসেন সোহাগ নিজে ভূঁইয়া ফিশিং অ্যান্ড সন্স লিমিটেডর পক্ষে পদ্মা গ্রুপের ভাউচারে স্বাক্ষর করে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।এ ছাড়া পরবর্তীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফ্রোজেন মানির ফাইল ছাড় করার কথা বলে আরও বিপুল অঙ্কের টাকা তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের জাল কাগজপত্র তৈরি করার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। চলতি বছরের ২৩ আগস্ট এ কোম্পানির জমি বিক্রি করে তারা সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে পরে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে ভুঁইয়া ফিশিং অ্যান্ড সন্স লিমিটেড নামক কোনও কোম্পানির অস্তিত্ব জয়েন্ট স্টকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমার বাবা খান মোহাম্মদ আমির একজন বয়োবৃদ্ধ। বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাভাবিক চলাফেরা ও সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হওয়ায় তাকে আসামিরা বিভিন্ন কৌশলে জিম্মি করে রাখে। আসামিরা কোনও ব্যাংকের কোনও ঋণ পরিশোধ করেনি।একইসাথে আত্মসাৎ করা টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগও করেছেন বাদী নাজিবা নাহিদ খান।