আবু্ল কাশেম জামালপুরঃ-
জামালপুর আওয়ামী লীগের দূর্গম দূর্গ। এই জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের একটি বাদে বাকি চারটিতেই একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় মাঠে বিচরণ করছেন। জামালপুর-৩ (মেলান্দহ- মাদারগঞ্জ) আসনে একমাত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। জামালপুর-১,
জামালপুর-২, জামালপুর-৪ এবং জামালপুর-৫ আসনে দলের বর্তমান সংসদসহ একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এসব প্রার্থীদের কেউ কেউ বিগতদিনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। সাধারণ ক্ষমার সুযোগে এরা দলীয় ছাতার নীচে পুনরায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তারা। এই নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মিরা বিক্ষুব্ধ।
জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জে দলের সাংগঠনিক কাঠামো সুসংহত হলেও অন্য ৫টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বলয়ে বিশৃঙ্খলা এখন আর অস্পষ্ট নয়। তৃনমূলের কর্মীরা মনে করেন অদৃশ্য কারণে ৫টি উপজেলায় আওয়ামী রাজনীতির মাঠে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করা হচ্ছে না।
জামালপুর-১, জামালপুর-২, জামালপুর-৪, জামালপুর-৫ আসনের সবকটি উপজেলাতেই সাংগঠনিক দৈন্যতা চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই ঢামাঢোলের মাঝে দেশী-বিদেশী অপশক্তিরা আজ বহুমুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেই ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত হয়েছে দলেরই মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু বিজাতীয় চিন্তা ও চেতণাধারী মানুষ, যারা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন নেতাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। ওইসব বিজাতীয় চিন্তাধারীরা, স্বার্থান্বেষী নেতাদের অনুকম্পায় আওয়ামী রাজনীতির তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোর নেতা বনে এখন দলের পোড়খাওয়া ও নিবেদিত কর্মিদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। এই নিয়ে দলের তৃণমূলে চরম বিক্ষুব্ধতা চলছে।
স্বার্থান্বেষী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা, যারা বিগত পনের বছর ধরে ক্ষমতার ছত্র ছায়ায় আওয়ামী লীগ বিক্রি করে, বিভিন্ন অপকর্ম করে ও নানান অপকান্ড করে নিজেদের অর্থনৈতিক ভীত সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট করতে দলের ভাবমূর্তির তেরটা বাজিয়েছে, সাংগঠনিক ঐক্যে ও সংহতির চৌদ্দটা বাজিয়ে দলের তৃণমূল কাঠামোর ভীত বিনষ্ট করেছে। এদের
কেউ কেউ এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় জেলার জামালপুর-১, জামালপুর-২, জামালপুর-৪ এবং জামালপুর-৫ আসনের মাঠে ঘুরছে আর বিভন্ন ধরণের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে মাঠকর্মিদের বিভ্রান্ত করছে। সেইসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই অতীতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী হিসাবে চিহ্নিত। তাঁরা দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনও করেছিলেন।
জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) আসনে ২০০৮ সনে নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন নুর মোহাম্মদ। দেওয়ানগন্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিগত দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। বর্তমানে এই আসনে তারা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়ে বিজয়ী প্রার্থীর আওয়ামী লীগের এডভোকেট আবু নাসের বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
জামালপুর সদর ( জামালপুর-৫) আসনে দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন ২০১৬ সনে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী । এ সকল প্রার্থীদের বিভিন্ন মুখী বক্তব্য-বিবৃতি ও তৎপরতায় জেলার চারটি সংসদীয় আসনেই সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এখন দৃশ্যমান বলে মনে করেন কর্মীরা। দলের এই কর্মি বিভাজন ও পরস্পর বিরোধী তৎপরতায় ওই তিনটি আসনেই নৌকার বিজয় এখন অনেকটাই হুমকির মুখে বলে মনে করেন তারা। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের অসাংগঠনিক তৎপরতা এখন দৃশ্যমান। তারা এখন জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নির্দেশনাই মানে না। এই উপজেলায় দলের তৃণমূলের সাংগঠনিক নেতৃত্বের চেইন অব কমান্ড এখন নেই বললেই চলে।
সবকিছু মিলিয়ে জেলার এই তিনটি আসনের সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা নিয়ে যে কোনো অংশগ্রহনমুলক নির্বাচনে সুফল প্রত্যাশা করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীরা।