
জাতির সংবাদ ডটকম।।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের ২৬,৪৭৫ হেক্টর আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এই বিশাল আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষের ফলে জনস্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে। দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার সাথে আপোষ করে তামাক চাষ বহাল রাখা কোনভাবেই একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের জন্য কাঙ্খিত হতে পারে না। জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আজ ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সভায় তামাক চাষ, উৎপাদন, বিপণন বন্ধ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মানে হেলথ প্রমোশনে পৃথক বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়।
“কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চুড়ান্ত করা হোক- শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে আজকের সভায় সন্মানিত বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স এর সাধারণ সম্পাদক এডঃ সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মিলন বাড়ই, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের শিক্ষার্থী নির্ঝরা ফাল্গুনী রশীদ, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রুমান, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সানজিদা সিদ্দিকা। সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তার।
এডঃ সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন তামাক চাষ লাভজনক হিসেবে প্রচার করা হলেও এটি নিছক মিথ্যা প্রচারণা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তামাক উৎপাদনকারী উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০টি দরিদ্র জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তামাক প্রাণ প্রকৃতিতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। উল্লেখ্য, হালদার পাড়ে তামাক চাষের ফলে ব্যাপক দূষণের কারণে ২০১৬ সালে নদীতে মাছের ডিম উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা অংশে ১৮(১) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ “ভয়েস অব ডিসকভারি” মামলায় দেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা প্রদান করে। সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা থাকলেও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাগণ উক্ত নির্দেশনা মানছেন না। রাষ্ট্রের উচিত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া এবং সেই আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা ।
শাগুফতা সুলতানা বলেন, তামাক পাতার মূল্য নির্ধারনী কমিটিতেও সরকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। তামাক কোম্পানি কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা দিলেও অত্যন্ত কৌশলে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রদান থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের ঋণের ফাঁদে ফেলে। শুধু তাই নয় তামাকজনিত চিকিৎসা ব্যায়ে অনেক পরিবার নি:স্ব হয়ে যায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল না হয়ে সারচার্যের অর্থ স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচি (সিএসআর) এর অর্থ সরকারি তহবিলে জমা দেবার বিধান প্রণয়নের আহ্বান জানান। পাবলিক হেলথকে সর্বাধিক গুরূত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবান্ধব,পরিবেশ বান্ধব রাষ্ট্র উন্নয়নে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে তামাকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা জরুরি।
তরুণ প্রতিনিধিরা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রণোদনায় প্রলুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এসব জমিগুলো খাদ্যশস্য চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তামাক উৎপাদনে নারী ও শিশুরা নিয়োজিত থাকার ফলে তারা স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুরা স্কুলে যেতে না পারায় শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। তামাক পাতা প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয় যার ফলে প্রতিনিয়ত বন উজাড় হচ্ছে। পার্বত্য বা পাহাড়ি অঞ্চলে ঢালু জমিতে তামাক চাষের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটির ক্ষয়সহ আকস্মিক বন্যার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তামাক চাষের বিভিন্ন ধাপে কার্বন নি:সরণের ফলে বায়ু দূষণ হচ্ছে। তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা দ্রুত চুড়ান্ত করা জরুরি।