ত্রিপুরারী দেবনাথ তিপু, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি।।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ঘিলাতলী গ্রামের হেমন্তী রবি দাস নিখোঁজের ১২ বছর পার হলেও এখনো ফেরেনি পরিবারের কাছে। দীর্ঘ এই সময়ে বোনকে হারানোর দুঃখ ও শোকের ভার সহ্য করতে না পেরে নিখোঁজের দুই বছর পর মারা যান তার মা; এরপর আরও তিন বছরের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন বাবা। ফলে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য রঙ্গু রবি দাস আজ সম্পূর্ণ একা।
স্থানীয়রা জানান, বোনের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রঙ্গু রবি দাস যেন জীবনের সব শক্তি নিয়েই খুঁজে চলেছেন হেমন্তীকে। বারো বছর ধরে তিনি ঘুরেছেন গ্রাম থেকে গ্রাম, থানায় থানায়, পরিচিত–অপরিচিত অসংখ্য মানুষের বাড়িতে। দিনরাত এক করে বোনের সন্ধান করতে করতে তিনি মানসিকভাবে প্রায় ভেঙে পড়লেও আশার প্রদীপটুকু নিভতে দেননি।
রঙ্গু রবি দাস বলেন, “আমার মা-বাবা বোনের অপেক্ষায় পৃথিবী ছেড়ে গেল। আমি এখনো খুঁজে বেড়াই। মনে হয়, বাঁচে থাকলে একদিন না একদিন ফিরে আসবে।” কথা বলতে বলতে তার কণ্ঠ কেঁপে ওঠে, চোখ ভিজে আসে অসহায়তার যন্ত্রণায়।
গ্রামবাসীর দাবি, হেমন্তীর নিখোঁজ রহস্য নতুন করে তদন্ত করা জরুরি। তারা বলেন, “একটা পরিবার পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ভাই রঙ্গুর মানসিক অবস্থার কথাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এখনো তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসতে পারে।”
ঘটনার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আইনি সহযোগিতা চাইতে গেলে। সেখানে রঙ্গু জানতে পারেন, নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মেহেরনগর গ্রামের এক ব্যক্তি—সফিকুল ইসলাম—তার অপ্রাপ্তবয়স্ক বোন হেমন্তীকে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে ধর্মান্তরিত ও বিয়ের করেছেন। নিখোঁজ হওয়ার সময় হেমন্তী ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
এই তথ্য জানার পর ভাই রঙ্গু রবি দাস ক্ষোভ ও কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন,
“আমার বোনকে প্রতারণা করে নিয়ে গেছে, ধর্মান্তরিত করেছে, বিয়ে করেছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। আমার বোনকে ফিরে চাই।”
১২ বছর পেরিয়ে গেলেও রহস্যের ঘনকুয়ায় ঢাকা রয়ে গেছে হেমন্তীর অন্তর্ধান। কিন্তু রঙ্গুর আশা—একদিন হয়তো ফিরে আসবে তার প্রিয় বোন, শেষ হবে এক পরিবারের দীর্ঘশোকের অপেক্ষা।