মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের মাধবপুরে আইএফআইসি ব্যাংকের উদ্যোগে আয়োজিত “তারুণ্যের উৎসব–২০২৫” অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যক্ষ মোহন মিয়াকে প্রধান অতিথি করা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে উপজেলার চৌমুহনী খুর্শিদ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের হলরুমে শিক্ষার্থীদের আর্থিক স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আইএফআইসি ব্যাংক মাধবপুর শাখার ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা মোহন মিয়া। পাশাপাশি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ, আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখা ইনচার্জ নাজমুল ইসলাম, পরিচালনা কমিটির সদস্য ছায়েদুর রহমান, সহকারী প্রধান শিক্ষক মিহির চন্দ্র দেবসহ আরও অনেকে।
আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান অতিথি হওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন—একজন কলেজ অধ্যক্ষ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বাভাবিক হলেও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তার বিচার হওয়া উচিত। তাদের দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বরাবরই ক্ষতিকর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অতীতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় সাবেক মন্ত্রী মাহবুব আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা রহম আলীর প্রভাবকে কেন্দ্র করে মোহন মিয়া কলেজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। তাদের দাবি—বিল–ভাউচার জালিয়াতি, কলেজের দোকানের সিকিউরিটি টাকার হিসাব গায়েব হওয়া, এমপি ব্যারিস্টার সুমনকে প্রটোকল বা আসন না দেওয়ার ঘটনাসহ একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ইতিহাস রয়েছে তার। এসব অভিযোগ সম্প্রতি আবারও আলোচনায় এসেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন—“আওয়ামী লীগ করার জন্য অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ছে, কিন্তু মোহন মিয়ার কোনো সমস্যা হয় না। সম্ভবত তিনি সবার সঙ্গে সুবিধা আদান–প্রদান করেন।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক পদে থাকতে পারেন না। তবুও তিনি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে বহাল থাকায় স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে—এ নিয়ম কি সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য?
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ইকরাম বলেন—“এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যদি কোনো রাজনৈতিক নেতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত।”
অভিযোগের বিষয়ে মোহন মিয়া বলেন—“আমি দল করি, করবও। কিন্তু কাউকে ক্ষতি করি না। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব বিষয়ে বিএনপির ভাইদের কারো সমস্যা না হলে সাংবাদিকদের মাথাব্যথার কারণ বুঝি না।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইএফআইসি ব্যাংক মাধবপুর শাখার ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান—“প্রধান অতিথি যে রাজনৈতিক পদে আছেন, তা আগে জানা ছিল না। কেউ আমাদের সতর্কও করেনি। ভবিষ্যতে আমরা আরও সতর্ক থাকব।”
ছবি: তারুণ্যের উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহন মিয়া।