সুহৃদ সমাজ সিলেটের সুহৃদ অন্তরঙ্গ আলাপন শব্দ দূষণ রোধে সাত্ত্বিক পথের আহ্বান

রবিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৫

শহীদ আহমদ খান।।

শব্দদূষণ আজ শুধু পরিবেশগত সমস্যাই নয়, এটি আমাদের মানসিক, সামাজিক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শান্তিকে বিনষ্ট করছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পটকাবাজি, উচ্চ ভল্যুমে বিবিধ বিজাতীয় সঙ্গীত, অশালীন নৃত্য ও হৈ-হুল্লোড়ের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা সনাতন ধর্মের সাত্ত্বিক ভাবধারাকে গভীরভাবে কলুষিত করছে। সরস্বতী ও কালীপূজার মতো পবিত্র ধর্মীয় উৎসবগুলো যে ধ্যান, ভক্তি ও অন্তর্গত শান্তির উৎস হওয়া উচিত তা আজ অনেক ক্ষেত্রে শব্দদূষণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় সুশীল সমাজের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত ২১ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় নগরীর নিম্বার্ক আশ্রমের হলরুমে সুহৃদ সমাজ সিলেট-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত “অন্তরঙ্গ সুহৃদ সংলাপ, শব্দদূষণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা : প্রেক্ষিত সিলেট” শিরোনামে গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা উপরের কথাগুলো বলেন।
সুহৃদ সমাজ সিলেট এর আহ্বায়ক শাবিপ্রবি সিলেটের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়-এর সভাপতিত্বে ও সদস্য লেখক সঞ্জয় কুমার নাথের সঞ্চালনায় প্রথমেই বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সদস্য অদ্রিকা অধিকারী, অংকিতা সাহা, সজল সেনগুপ্ত, অলি দাস, সাম্য দাস, সুচিত্রা রায় ও মন্দিরা দাস ঝিনুক।
এরপর মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন সুহৃদ সমাজের সদস্যবৃন্দ জ্যোতির্ময় সিংহ মজুমদার চন্দন, ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, অধ্যাপক পার্থ সারথি নাগ, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, সমাজসেবিকা শিলা সাহা, কবি সুমন বনিক, অধ্যক্ষ শাশ^তী ঘোষ সোমা, শিক্ষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব উজ্জ্বল দাস ও লেখক সঞ্জয় কুমার নাথ। সুধীসমাজের পক্ষ থেকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের সম্পাদক শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের ট্রাস্টি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু।
উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন অয়ন, অনিন্দ্য, অনন্যা ও শ্রেয়া। তত্ত্বাবধানে ছিলেন সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ মদন মোহন সরকারি কলেজ শাখা। উদ্বোধনী সংগীতের পর সংগঠনের প্রেক্ষাপট ও আগামীর চিন্তন তুলে ধরে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্য সচিব উজ্জ্বল দাস। এরপর সুহৃদ সমাজের উপদেষ্টা প্রয়াত অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার সাহার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অতঃপর বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য সমাজসেবক জ্যোতির্ময় সিংহ মজুমদার চন্দন।
চা বিরতির পর অন্তরঙ্গ সুহৃদ সংলাপ পর্ব সঞ্চালনা করেন ড. হিমাদ্রী শেখর রায়। এ সময় বক্তব্য ও শব্দদূষণ বন্ধে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেন শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ, ট্রাস্টি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য, অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দেব, সমাজসেবী রতন মনি মোহন্ত, শিক্ষাবিদ ও লেখক মিহির কান্তি চৌধুরী, অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার দাশ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা পান্না লাল রায়, শিক্ষাবিদ অনিল কৃষ্ণ মজুমদার, অব. শিক্ষক স্বপন চক্রবর্তী, নাট্যজন নীলাঞ্জন দাস টুকু, সংগঠক প্রদীপ দেব, ইমিগ্রেশন এডভাইজার জি ডি রুমু, ব্যাংকার জ্যোতি মোহন বিশ^াস, ব্যাংকার দ্বীপক কুমার দাশ, মৃণাল কান্তি চৌধুরী মঞ্জু, সংগঠক ধ্রুব গৌতম, অমিত ত্রিবেদী, পার্থ প্রতীম নাথ, কৃষ্ণা তালুকদার কনিকা, ছড়াকার অজিত রায় ভজন, অধ্যাপক নন্দ কিশোর রায়, শাবিপ্রবি কর্মকর্তা অসিত সূত্রধর, সুমন কুমার দাশ, সীমা রাণী সরকার প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ^াস, অ্যাডভোকেট ফনী ভূষণ সরকার, অব. মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সত্যব্রত রায়, অব. ব্যাংকার রূপক ভট্টাচার্য্য, সংগীত শিল্পী প্রভাতী সিংহ মজুমদার, নমিতা দেব, সর্বমঙ্গলা দত্ত চৌধুরী, বাচিক শিল্পী জ্যোতি ভট্টাচার্য, পূরবী চ্যাটার্জী, সুনীল রঞ্জন দাস, মহিতোষ মজুমদার, অব. ব্যাংকার অশোক কুমার রায়, অব. ইঞ্জিনিয়ার অজিত বরণ দেবনাথ, অব. উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সুত্রধর, সংগীত শিল্পী জয়তী ঘোষ লোনা, কার্তিক পাল, ডাঃ প্রণদীশ চন্দ্র দেব, অব. শিক্ষক নরেশ চন্দ্র রায়, অপরেশ দাস অপু, রিপন এষ চৌধুরী, চয়ন সাহা, বিশাল দাস, পরমা সিংহ মজুমদার, মুগ্ধ সাহা, সজল সেন গুপ্ত, অমিত দাস, বিপ্লব কান্তি দাস, ঝলক আচার্য, মাখন বনিক, ডা. দেবরাজ চৌধুরী, ডা. চয়নিকা দেব, পূজা রানী দাস অন্তী, রাজন সাহা, আকাশ সরকার, দুর্জয় সাহা, সৌরভ চক্রবর্তী, সুবিনয় আচার্য্য রাজু, বাচিক শিল্পী সুকান্ত গুপ্ত, সুমন্ত গুপ্ত, সীমা রানী সরকার, দিলীপ কুমার দাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সুশীল সমাজকে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে যে, ধর্ম কখনোই উচ্ছৃঙ্খলতার প্রশ্রয় দেয় না। সনাতন ধর্ম বারবার ‘সাত্ত্বিকতা’, ‘নিয়ম’, ‘শান্তি’ এবং ‘অহিংসা’র ওপর জোর দিয়েছে। পটকা- বোমা ফোটানো বা উৎকট শব্দে সঙ্গীত বাজানো কোনোভাবেই ভক্তির পরিচয় নয়; বরং তা অন্যের প্রতি অসম্মান ও পরিবেশের প্রতি অবহেলার পরিচায়ক। সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিকরা স্থানীয় মন্দির কমিটি, পূজা উদ্যাপন পরিষদ, যুবসমাজ ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ও নান্দনিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বক্তার বলেন, সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্মীয় উৎসব ফিরে পেতে পারে তার স্বাভাবিক শান্তি, সৌন্দর্য ও পবিত্রতা। শব্দদূষণমুক্ত, সাত্ত্বিক ও শৃঙ্খলাপূর্ণ উৎসবই হোক আমাদের আগামী দিনের অঙ্গীকার।
সবশেষে সুহৃদ সমাজের আহ্বায়ক ও সভার সভাপতি প্রফেসর ড. হিমাদ্রী শেখর রায় সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে শব্দদূষণ বন্ধসহ সাত্ত্বিকভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের আহ্বান জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।