।। মীর নাহিদ আহসান ।।
আলহামদুলিল্লাহ। পরম করুনাময়ের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। অতল শ্রদ্ধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বাংলাদেশের সবচেয়ে নান্দনিক, হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.) এর পবিত্রভূমি ও জাতির পিতার স্মৃতিধন্য শ্রেষ্ঠতম জেলা মৌলভীবাজারে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দানের জন্য। অশেষ কৃতজ্ঞতা এই জেলার সকল সম্মানিত এমপি মহোদয়, সকল সম্মানিত উপজেলা চেয়ারম্যানবৃন্দ, সকল সম্মানিত মেয়রবৃন্দ ও অন্যান্য সকল জনপ্রতিনিধিবৃন্দের প্রতি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, শিক্ষকবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দসহ সকলের প্রতি।সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাতে চাই নৃতাত্ত্বিকভাবেই অত্যন্ত কোমল ও উন্নত চিত্তের অধিকারী এই জেলার সকল প্রবাসীসহ চা শ্রমিক, সাধারণ কৃষক, মুটে, জেলে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সকল প্রান্তিক সাধারণ মানুষকে যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শর্তহীন ভালোবাসায় তাঁর নির্দেশেই নিবিড় ঐক্যে নির্মাণ করছেন মৌলভীবাজারের সামগ্রিক উন্নয়ন। আমি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান যে দেশের শ্রেষ্ঠতম জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে গত ২ বছর ৯ মাস সব মিলিয়ে ১০০২ দিন দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি।
২০২০ সালের জুলাই মাসে করোনার চূড়ান্ত প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এ জেলায় কাজ শুরু করি। এসেই লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন ; সব অদ্ভুতুড়ে শব্দের মধ্যে নতুন জেলায় জটিল জীবনযাপন শুরু। এরপর মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা, ঘরে ঘরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সাহায্য পৌঁছানো, ৩৩৩ এর অনুরোধে খাদ্য পৌঁছানো, হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, মানুষকে ভ্যাকসিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করা, ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা এসব করতে করতেই কেটে গেছে প্রথম বছরটি।
করোনাকালে কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যঝুঁকি লাঘবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে “Smart হাটঃ অনলাইন কোরবানির পশুর হাট” ছিলো বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন পশুর হাট।মৌলভীবাজার জেলার জনমানসে বিশেষত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসপটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছি। জাতীয় দিবসগুলোতে জেলার সকল স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলোকে সম্পৃক্ত করেছি। বঙ্গবন্ধুকে আগামী প্রজন্মকে চেনাতে আয়োজন করা হয় “বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড”, “জয় বাংলা সাইকেল র্যালি”, মুজিব শতবর্ষে নির্মাণ করা হয় “খুঁজে ফিরি পিতার পদচিহ্ন” নামক ডকুমেন্টারি, “খুঁজে পাই চেতনার বাতিঘর” নামক স্মারকগ্রন্থ। এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকাশ করা হয় “শতবর্ষে শত তথ্যে বঙ্গবন্ধু” নামক লিফলেট/পুস্তিকা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি ,চায়ের দেশখ্যাত মৌলভীবাজারের পর্যটন খাতকে জনবান্ধব করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা হয় “ট্যুরিস্ট বাস”। চা শ্রমিকদের আবাসন নিশ্চিতকরণসহ চা বাগানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহায়তা প্রদান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাস্তবায়িত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ঘর নির্মাণ, বাইসাইকেল বিতরণসহ শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের কাজসমূহ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে গেছে।জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার সর্বদাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সচেষ্ট থেকেছে। চা বাগানের ভাইবোনদের মজুরি নিয়ে অসন্তোষের সময় সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছি, যা আমার চাকুরিজীবনে একটি অনন্য দিক হয়ে থাকবে।
‘মুজিববর্ষে বাংলার মাটিতে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর। মৌলভীবাজর জেলার মোট ৪,৬১১ জন গৃহহীন ও ভূমিহীন এর মধ্যে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায় মিলে ইতোমধ্যে ৩৯৩৬ টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়। সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ জেলার রাজনগর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। মৌলভীবাজারে কর্মকালীন সময়ে আমাদের একটি অন্যতম প্রিয় কাজ কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজ, মৌলভীবাজার প্রতিষ্ঠা। আমি স্বপ্ন দেখি আমার এই প্রতিষ্ঠানটি মৌলভীবাজারের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সারাদেশে জেলা কার্যালয় ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার। ভূমি রাজস্ব মামলা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে জেলা পর্যায়ে এন্ট্রিকৃত মোট দেওয়ানি ও রাজস্ব মামলার সংখ্যার ভিত্তিতে সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করে মৌলভীবাজার জেলা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির চূড়ান্ত মূল্যায়নে সিলেট বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার এবং ২০২১ সালে শুদ্ধাচারে বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা প্রথম স্থান অর্জন করি। এছাড়াও জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সারা বাংলাদেশে মৌলভীবাজার প্রথম স্থানে ছিলো এবং কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে সারাদেশে ৬ষ্ঠ অবস্থানে থেকে শেষ করেছি। এ সকল অর্জনই ছিল আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। তাই এ বেলায় সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
পরিশেষে, জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মকালীন ০২ বছর ০৯ মাসের প্রতিটা সময়, প্রতিটা ক্ষণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষটির জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। এতকিছুর পরেও মনে হচ্ছে মৌলভীবাজারের এই জনপদের, মাটি ও মানুষের টানে আরো অনেক কিছু করার সুযোগ ছিলো। বারবারই মনে হচ্ছে আমার সকল কিছুই কেন শূন্য করে দিই নি। বিদায় বেলায় মৌলভীবাজারের অসংখ্য, অজস্র ভালোলাগার, ভালোবাসা………. তার চেয়েও বড় কিছু “মায়া” বুকে করে নিয়ে যাচ্ছি। মৌলভীবাজার ভালো থাকুক, মৌলভীবাজারবাসী ভালো থাকুক এই প্রত্যাশা করছি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক
মীর নাহিদ আহসান