
লেখক: সৈয়দা রাশিদা বারী ,বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক
ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানের থেকেও জাতীয় টান বড়। ২০২৫ এর ঈদ-উল-আযহার শিক্ষা ত্যাগের মহিমায় সকল মানুষের জন্য এটাই হোক বার্তা। নারী-পুরুষের ভেদাভেদ, সকল বৈষম্য দূর হোক। সকলের জীবনে শান্তি থাকুক–এটাই প্রত্যাশা। সৃজনশীল সুন্দর জীবন গঠনে পিতা-মাতার ঘরেই অর্জন হোক ভাই-বোন, পুত্র-কন্যার সম অধিকার। সমাজে শালীনতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন পুরুষের সহযোগিতা।
পুরুষ ছাড়া নারীর ভালো কিছু হয় না। নারী ছাড়াও পুরুষের ভালো কিছু হয় না। যেমন কবি নজরুল বলেছেন, মহাবিশ্বে যত ভালো কিছু হয়েছে অর্জন, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। আসুন নজরুলের এই কথার মূল্যায়ন করি এবার এই ঈদুল আযহা থেকে। তাজ্জব হয়ে দৃষ্টি থমকে যায় যখন দেখি নারী হয়েই নিরপরাধী নারীকে বকে দেয় বা দিয়েছে। এই জন্যই নারীদের উন্নতি নাই। পুরুষও নারীকে তাচ্ছিল্য করে।
নারীও মূর্খের মতো না বুঝে, নারীকেই নারী অবমাননা করে। যেখানে সেখানে পুরুষে পুরুষে কিছু হলেও, দুই কথা গোলমাল বাঁধলেও পুরুষ নারীর কথা তুলে বকে, মা তুলে বকে দেয়। বাবা তুলে তো বকে না? এটা একটা খারাপ জিনিস। তাই এটা দমন হতে হবে। অকারণে মমতাময়ী নিরপরাধী মা, নারীর নামে বকে দেয় পুরুষ, বলে: খানকি মাগির পোলা! বেশ্যা মাগির পোলা! চুতমারানী মাগির পোলা ইত্যাদি।
এই দিক থেকে নারীদের মতো পুরুষ নয়। পুরুষ অনেক সচেতন। শিখিয়ে দিলেও বলে না চরিত্রহীন মিনসার পোলা। চুতমারাইনা পুরুষের পোলা। বদমাইশ মিনসার পোলা! লুচ্চার পোলা বা পুত! ইত্যাদি ইত্যাদি।
অথচ পুরুষ কথায় কথায় বেশ্যার পুত, নটির পোলা ঠিকই বলে। মহানন্দে বলে, কিন্তু নারীরা পুরুষদের এইটার প্রতিবাদ তো করেই না বরং আরো পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে, নারীদেরকেও নারীরা বকে। বলেছি তো অকারণে বকে, জাতির টান পুরুষের ঠিকই আছে, জাতির টান নারীদেরই নাই।
সম্পর্কের টানের থেকেও পুরুষদের কাছে পুরুষদের জাতির টানটাই বড় বলে মনে হয়। তাই মা, বোন, স্ত্রী, কন্যার ওরা উপযুক্ত মর্যাদা করতেও চাই না। করে না। এটা কিন্তু ভালো কাজ। সম্পর্কের টানের থেকে, জাতির টান থাকাই ভালো। এই ভালো কাজটাই নারীদের মধ্যে নাই। তাই শিক্ষার যুগেও নারীদের শিক্ষার কোন কদর্য নাই। যে শিক্ষার ভিতরে শিক্ষা নাই, দীক্ষা নাই, সেই শিক্ষা থাকা, না থাকা সমান কথা।
এই কারণেই পুরুষের সব কিছুতে আপডেট আছে। শুধু নারীর ক্ষেত্রেই ব্যাকডেট। কোন উন্নতি উন্নয়নে নারীদের আপডেট নাই প্রযুক্তি অনুসারে। সুযোগ সুবিধার বালায় তো নাই বটেই। তারপরও উন্নতি উন্নয়ন বলতে সবটুকু ঘাটতি। যা হওয়ার দরকার ছিলো সেই তুলনায় নাই, হ্যাঁ নাই নারীদেরই দোষে নাই। কারণ নারীরা শুধু ব্যক্তিগত নিজেরটা বোঝে। হিংসাই এটাক হওয়া এর প্রথম কারণ।
এছাড়া অন্য নারীর কথা এবং নারী প্রজন্মের কথা নারী জাতি ভাবে না। সম্পর্কের উপরেও যে জাতির টান থাকে, সেই টানটাও রাখে না। আর এটাও একটা কারণ। নারীরা শিক্ষিত নামে, কাজের ক্ষেত্রে মূর্খতার পরিচয় দেয়।
মূর্খ বলেই নারীরা নারীদের হিংসা করে তাই জাতির টান রাখে না। এটা বললে মিথ্যে ও ভুল হবে না নিশ্চয়ই। সামগ্রিক কথা হল, নারীর উন্নয়নে নারীর কষ্ট, ব্যথা দমনে নারীর অনীহা অগ্রাহ্য। যেটা পুরুষরা করে না। ওরা জাতির টান এতই বোঝে যে, জন্ম দেওয়া নিজের কন্যাকে বাবা মানুষ হয়েও আনন্দে ঠকায়। ভাবে যে নারী, তাই ঠকাতে আনন্দ।
কন্যার একভাগ, পুত্রের দুই ভাগ। এটাও এই কারণে সৃষ্টি। কি একটা মহাবৈষম্য মহামারীর মতো, বাবা হয়েও কন্যার ছোট করা। শুধু বাবা কন্যাকে নারী ভাবে বলেই। মেয়ের সম্ভাবনার পাত্তা দেয় না বাবা, নারী হওয়ার কারণে বাবা কন্যাকে তাচ্ছিল্য, হেও প্রতিপন্ন করেন।
শিক্ষা অন্যান্য সব উন্নতিতে বাবার বৈষম্য নিষ্ঠুর তা-বতা। ধর্মের দোহাই দিয়ে বাবা হৃদয়হীনের মত নির্মম হন। কন্যার কাঁচা কচি ছোট মনে এতে আঘাত লাগে, এই আঘাতও বাবা এভয়েড করেন। পুত্র ও কন্যাকে দুই নজরে বাবা দেখেন। কেমন করে দরদের বাবা, আদরের বাবা, পুত্র কন্যাকে দুই অন্তরে রাখেন, এভাবে কন্যাকে এমন হেও করে থাকেন– জাতির টানেই তো?
জাতির টানেই তো কন্যাকে ঠকান! পুত্রকে জেতান! কারণ বাবা ভাবেন পুত্র পুরুষ, কন্যা নারী, কন্যা নারী কোন না কোন পুরুষের ভোগের সামগ্রী? তাহলে বাবাই কি বৈষম্য করে স্নেহময় কন্যাকে নারী ভেবে?
আর কোথাও কোন দরদীজন, নির্ভেজাল, নিষ্কলুষ সম্পর্কের কেউ থাকতে পারে? যে নারীকে সম্মান করবে? নারীকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত মর্যাদা করবে? প্রাপ্তি দেবে। বাবার থেকেও ভেজালমুক্ত পাওনা অধিকার নারীর থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করাও যেন পাপ, মহাপাপ। কারণ মা-বাবার থেকে তো আর বড় কিছু নাই নির্ভেজাল সম্পর্ক সম্পদ। যার কোন পরিবর্তন হয় না, পরিবর্তন নেই, সেই আসল স্থানেই যখন নারী বঞ্চিত, শোষিত, লঙ্ঘিত, লাঞ্ছিত। তো আর কোথায় এমন সুন্দর সম্পর্ক আছে বা থাকবে?
কিন্তু যখন একজন নারী অন্য নারীর স্বার্থ ক্ষুন্ন করে, পুরুষের স্বার্থে আনন্দে তাল দেয়। তখন সেটা কেমন ভৎর্সনা, বীভৎস অবস্থায় পরিণত হয়। এই দুঃখ ব্যক্ত করার নয়, ভীষণ দুঃখজনক। যা বলার ভাষাও নাই, চিন্তাও করার নয়, ধারণার বাইরের সেই কষ্ট-ব্যথা, দুঃখ-বেদনা।
ঈদ-উল-আযহা আামাদেরকে ত্যাগ ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের শিক্ষা দেয়। ২০২৫ এর ঈদ-উল-আযহার ত্যাগের মহিমায় সবাইকে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের তাগাদায় সচেতন করুক। একই সাথে হিংসা, পরশ্রীকাতরতা দূর হোক সমাজ থেকে। পুরুষ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসুক। একজন মায়ের, একজন বোনের, একজন কন্যার সম্মান দিতে। নারীরাও নারীদের সম্মান করুক। সম্পর্কের থেকেও জাতির টানে, নিজেদের ভেজাল মুক্তভাবে সংশ্লিষ্ট রেখে।
আসন্ন ঈদ সবার জন্য সুখ, সমৃদ্ধি ও আনন্দ বয়ে আনুক। বিশ্বের সবাইকে ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসকে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া এই ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত এই দেশের সব মানুষের শান্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠন নিশ্চিত হবে বলে আশা করছি।