
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া শুক্রবার ভোররাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক শহরে ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বরাতে জানা গেছে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত ও ৪৯ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগের কর্মী ছিলেন।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় রাশিয়া ৪০৭টি ড্রোন ও ৪৫টি ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় ড্রোন আক্রমণের একটি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগেই ইউক্রেনের বোমারু বিমানঘাঁটিতে হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশোধের অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খবর অনুসারে, কিয়েভের সলোমিয়ানস্কি জেলায় একটি আবাসিক ভবনে রুশ ড্রোন আঘাত হানে। এতে ভবনের একাংশ ধ্বসে পড়ে এবং নিচে থাকা গাড়িগুলো পাথরের চাপে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা এক চিত্রসাংবাদিক জানান, ভবনে বড়সড় গর্ত তৈরি হয়েছে এবং দেয়ালে দগ্ধ চিহ্ন দেখা গেছে।
রুশ হামলায় কিয়েভের মেট্রোরেল ট্র্যাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মেট্রো যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। শহরের বাইরের রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু ট্রেনের রুটও পরিবর্তন করা হয়েছে।
শুধু কিয়েভ নয়, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর টারনোপিল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লুটস্কেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। টারনোপিলে একটি শিল্প কারখানায় আগুন ধরে গেলে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। লুটস্কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি ভবন, বাসাবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আহত হয়েছেন ১৫ জন।
ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়ার সারাতোভ ও রিয়াজান অঞ্চলের এঙ্গেলস ও দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে এবং তিনটি তেলের গুদাম ধ্বংস করেছে। এছাড়া সম্প্রতি ইউক্রেনীয় গোয়েন্দারা ড্রোনের মাধ্যমে রাশিয়ার কয়েকটি কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস করে দেয়।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, যারা রাশিয়ার ওপর চাপ দিচ্ছে না, তারাও এই যুদ্ধের দায় এড়াতে পারে না। এখনই দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, এই আক্রমণ মূলত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে। বহু তলা ভবন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, তারা সামরিক এবং সামরিক-সম্পৃক্ত স্থাপনাগুলোতেই হামলা চালিয়েছে এবং এটি ছিল ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিক্রিয়া।
এই হামলার প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে আতঙ্ক আরও বেড়েছে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মেট্রো স্টেশন কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে অবস্থান নিয়েছে।