চলতি মাসের মাঝামাঝি দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে আসছেন তিনি। তার এ সফরে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর ঢাকার পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালসহ একাধিক বিষয় আলোচনায় রাখা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকা সফরকালে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। আগামী ১৪ জানুয়ারি ঢাকা আসতে পারেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বাংলাদেশ বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা হচ্ছেন ডোনাল্ড লু। ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছিলেন তিনিই। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে তার হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক এই অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ প্রকাশ্যে করেছিলেন ইমরান খান নিজেই।
ডোনাল্ড লু ৩০ বছরের ওপর মার্কিন প্রশাসনে কাজ করছেন। ২০২১ সালে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি কিরগিজস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি আলবেনিয়ায়ও রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতে মার্কিন দূতাবাসে উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই কূটনীতিক।
ডোনাল্ড লু-এর সফরকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সরকারের তিন মন্ত্রী আলোচনা করেছেন। গত রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হয় রুদ্ধদ্বার এক বৈঠক। ওই বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থার মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে ডোনাল্ড লুর সফরের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে আইনের শাসন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবিলায় একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।
সফরটি দ্বিপক্ষীয় জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় এতে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র তার অগ্রাধিকার বিষয়গুলোর মধ্যে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি শ্রম অধিকার, দরপত্র প্রতিযোগিতায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়গুলোতে আলোচনা করবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জিএসপি পুনর্বহাল, শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে।