জাতির সংবাদ ডটকম।।
দেশের অন্যতম শীর্ষ এবং রপ্তানিমূখী বহুজাতিক ওষুধ প্রস্ততকারী কোম্পানি বায়োফার্মা ও বায়ো গ্রুপের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির অনন্য পথিকৃৎ ডা. লকিয়ত উল্যা।
গত সোমবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাকে এই পদে মনোনয়ন প্রদান করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, বায়োফার্মার চেয়ারম্যান ডা. শাহাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. আনোয়ারুল আজিম, সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মোহা. মিজানুর রহমান, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. আলী আশরাফ খান ও মো সাইফুল আমীন, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. তৌহিদ আল বেরুনি, বিপিএল হাউজিংয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ও প্রজেক্ট অপারেশন মো, জহিরুল হক এবং বরেণ্য চিকিৎসক ডা. আলী আশরাফ।
এছাড়াও সিএমও, সিএসও, জিএম, পিএমডি, হেড অব এইচআর, কোম্পানি সেক্রেটারি, হেড অব ট্রেনিং, হেড অব ফাইনান্স, হেড অব ডিস্ট্রিবিউশন, হেড অব আইটিসহ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বায়োফার্মায় অবস্থান ও ভূমিকা
ডা. লকিয়ত উল্যা বায়ো গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার। ইতিপূর্বে তিনি কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মার্কেটিং ডিরেক্টর দায়িত্ব পালনকালে তার কর্মদক্ষতায় বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বানিজ্য গড়ে তোলার মাধ্যমে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং ফার্মাসিটিক্যাল সেক্টরে বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বায়োফার্মার পক্ষে তিনি মানসম্পন্ন পণ্য প্রস্তুতকারক হিসেবে ‘গোল্ডেন ইউরোপ ফর কোয়ালিটি অ্যাওয়ার্ড’; ২০২০ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসাধারণ পরিষেবা প্রদানের জন্য মালয়েশিয়ান ফিল্ড হসপিটালের কমান্ডার কর্নেল ডা. মো. জাকি মোখতারের কাছ থেকে ‘সার্টিফিকেট ফর অ্যাপ্রিসিয়েশন’ গ্রহণ করেন।
বায়োফার্মা ছাড়াও বায়ো গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান- বায়ো প্রপার্টিজ, বায়োফার্মা অ্যাগ্রোভেট, বায়ো ন্যাচারস, বায়ো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বায়োফার্মা ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
শিক্ষাজীবন ও প্রকাশনা
ডা. লকিয়ত উল্যা ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে ১ম বিভাগে এসএসসি, ১৯৮৮ সালে একই বোর্ড থেকে ১ম বিভাগে এইচএসসি এবং ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম) থেকে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট এবং পার্সোনেল ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমায় সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে উভয় ক্ষেত্রে ‘চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ বা গোল্ড মেডেল লাভ করেন। এরপর আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন এবং ‘চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন।
বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে চিকিৎসা ও ওষুধ ম্যাজেমেন্ট এবং উন্নয়ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি গবেষনাধর্মী ও তথ্যবহুল প্রকাশনা রয়েছে তার। এছাড়াও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অসংখ্য প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টতা
বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং কমনওয়লেথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ল্যাটিন আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ হার্ট অ্যান্ড হাসপাতাল, চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিগমা ল্যাব ও ন্যাশনাল হাসপাতাল চট্টগ্রামের পরিচালক এবং ডক্টর্স ট্রাস্টের ডেপুটি মেম্বার অ্যাডমিন পদে দায়িত্ব পালন করছেন এই স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যক্তিত্ব।
এছাড়াও তিনি মেঘনা আইডিয়াল ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ম্যাস অ্যাডভান্সমেন্ট নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, তুর্কি-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং শ্রীলংকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য; সার্ক, মার্কেটিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া অ্যাসোসিয়েশন, ভলান্টারি ব্লাড ব্যাংক, পিস বাংলাদেশ, ফ্রেন্ডস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লা, রিলায়েন্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি ঢাকা, চৌদ্দগ্রাম কো-অপারেটিভ সোসাইটি ঢাকা’র আজীবন সদস্য; কুমিল্লা দারুল ইহ্সান সোসাইটি, বিএমএ ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ হার্ট অ্যান্ড চেস্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য; ইটিসি ফাউন্ডেশন ঢাকা এবং স্পিড ট্রাস্ট চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা; সন্ধানী রক্তদাতা প্রোগ্রাম এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সদস্য; এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ঢাকা সিটির সাবেক কেন্দ্রীয় কাউন্সেলর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দাতা সদস্য, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের স্বাধীন পরিচালক এবং আন্ডার গ্র্যাজুয়েট অ্যান্ড গ্র্যাজুয়েট রিচার্স কাউন্সিলের সদস্য।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ
ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন অর্থায়ন’ বিষয়ক এশিয়া-প্যাসেফিক সম্মেলন; তুরস্কে ‘এলডিসি সম্মেলন’; কাজাখস্তান, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ‘ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনোমিক ফোরাম’; মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সেনেগালে ‘ওআইসি বিজনেস কনফারেন্স’; বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর বিভিন্ন ডেলিগেশনে বিশ্বের অনেক দেশ; জাপান, ইতালি, স্পেন, চিন ও ভারতে ‘ফার্মাসিউটিক্যাল কনভেনশন’; শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে ‘সার্ক বিজনেস কনফারেন্স’; ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানে ‘ডি-৮ কনফারেন্স’; বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা ও ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনফারেন্স; তুরস্ক ও ইয়েমেনে ‘মুসিয়াদ বিজনেস কনফারেন্স’; ঢাকায় ‘ডিসিসিআই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স’ মালয়েশিয়ায় ‘ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা কনফারেন্স’; পাকিস্তান, মিশর ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনফারেন্স’; মালয়েশিয়ায় ‘মারাউই রিকনস্ট্রাকশন কনফারেন্স’-সহ অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার
২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল ট্রেড লিডার্স ফ্রান্স’ কর্তৃক ‘গোল্ডেন ইউরোপ অ্যাওয়ার্ড ফর কোয়ালিটি’; ২০১৮ সালে ‘এশিয়ান বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল ফোরাম সিঙ্গাপুর’ কর্তৃক ‘এশিয়াজ গ্রেটেস্ট ব্র্যান্ড অ্যান্ড লিডার্স অ্যাওয়ার্ড’; ২০১৯ সালে ‘সিএমও এশিয়া প্যান-প্যাসিফিক সিঙ্গাপুর’ কর্তৃক ‘এক্সিলেন্স ইন ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড’; ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডে ‘দ্যা বিজ ইউরোপ’, যুক্তরাষ্ট্রে ‘দ্যা বিজ আমেরিকা’, মালয়েশিয়ায় ‘দ্যা বিজ এএমই’ কর্তৃক ‘দ্যা বিজ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’; এবং ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ^বিদ্যালয় চট্টগ্রাম কর্তৃক ‘সাকসেস ফার্মা লিডার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন ডা. লকিয়ত উল্যা।
বিদেশ ভ্রমণ
বিভিন্ন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে ডা. লকিয়ত উল্যা এশিয়ার- সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, চিন, জাপান, ইয়েমেন ও থাইল্যান্ড; ইউরোপের- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, তুরস্ক ও রাশিয়া; আফ্রিকার- দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো, কেনিয়া, মোজাম্বিক, সুদান, লাইবেরিয়া, সেনেগাল, আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া, মিশর, রিবিয়া, ঘানা, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, জাম্বিয়া ও সোয়াজিল্যান্ড; উত্তর আমেরিকার- যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা; এবং দক্ষিণ আমেরিকার- ব্রাজিল, কলম্বিয় ও চিলি ভ্রমণ করেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন
ডা. লকিয়ত উল্যা ১৯৭০ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুলাশার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত মোহাম্মদ নোমান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, তার স্ত্রীর নাম ডা. মুশফিকা আশরাফ, যিনি দূরারোগ্য রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিনযাবৎ লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।