মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ, শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সারা দেশ

সোমবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডেস্ক: মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে কবর দেওয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সন্তোষে তার পরিবার, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মুরিদান, ভক্ত, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করছে। ভাসানী ফাউন্ডেশন ও খোদা-ই-খেদমতগারের উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী ‘ভাসানী মেলা’ চলছে। দেশ জুড়ে তাকে স্মরণ করা হবে।

বিএনপির উদ্যোগে ‘মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি’ দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ তারা টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনাসভা করবে। এছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি টাঙ্গাইল শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘গণঅভ্যুত্থান-২৪ পরবর্তী সময় বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীর প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। মাজারপ্রাঙ্গণে সাত দিনব্যাপী মেলায় দেশজ পণ্যের স্টল ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন চলছে।

মওলানা ভাসানী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সয়া-ধানগড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া ভাসানী ১৯০৩ সালে বিপ্লবী চেতনার সঙ্গে এবং ১৯০৭ সালে ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্যে দেওবন্দ মাদ্রাসায় যুক্ত হন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন। ১৯২৩ সালে ‘স্বরাজ্য পার্টি’ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং ১৯২৬ সালে আসামে কৃষক-প্রজা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৯ সালে ধুবড়ীর ভাসান চরে কৃষক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ‘ভাসানী’ উপাধি যুক্ত হয় তার নামের সঙ্গে। দীর্ঘদিন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা এবং ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার ‘খামোশ’ উচ্চারণ রাজনৈতিক ইতিহাসে মাইলফলক। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি দেশব্যাপী ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে পরিচিতি পান। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেকেই কয়েক দিন আগে থেকেই সন্তোষে এসে অবস্থান নিয়েছেন।

প্রেরণার উত্স হয়ে থাকবেন :‘অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী সব সময় আমাদের প্রেরণার উত্স হয়ে থাকবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রবিবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই প্রবাদপুরুষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপসহীন ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বিবৃতিতে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা ভাসানীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলা ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না। তারা ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি জানান। ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তারা বলেন, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবি মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রথম সামনে নিয়ে আসেন। তার নেতৃত্বেই পূর্ববাংলার মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি শক্তভাবে তুলে ধরে, যা পরবর্তী কালে স্বাধীনতার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে।