নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী উত্তর বাড্ডা এলাকার হাজী আব্দুল কাদের মিয়া মৃত্যুর পর তার বড় মেয়ে নিলুফা আক্তার একমাত্র ছোট বোন মুর্শিদা আক্তারকে বঞ্চিত করে নিজেকে একক ওয়ারিশ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি নিজ নামে দলিল করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্পত্তিতে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঢাকার ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা হয়েছে। ছোন বোন মুর্শিদা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন (মামলা নং-৮০৩/২০২৩)। মামলায় বড়বোন নিলুফা আক্তারসহ মোট আট জনকে বিবাদী করা হয়।
এছাড়াও মুর্শিদা আক্তার তার পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যায্য অংশ ফিরে পেতে এবং সম্পত্তি আত্মসাৎ এর এই ঘটনা তদন্তপূর্কক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর গত ২২ ফেব্রুয়ারি আবেদন দাখিল করেছেন।
রাজধানী বাড্ডা এলাকার হাজী আব্দুল কাদের মিয়া মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা ও স্ত্রীকে রেখেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা ছিলেন হাজী আব্দুল কাদের মিয়া । ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সেলিমের দেয়া প্রত্যয়ন পত্রে মৃত হাজী আব্দুল কাদের মিয়া দুই কন্যা ও স্ত্রী মৃত্যুকালে রেখে গেছেন বলে জানান। মৃত্যুর পূর্বে আব্দুল কাদের মিয়া তার কোন সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে যাননি বলে জানা গেছে। তার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সাত তলা একটি বাড়ি, দুই তলা বিশিষ্ট হাজী আব্দুল কাদের মার্কেটসহ ১০ কাঠা জমি, ১তলা বাড়ীসহ ১৫ কাঠা জমি এবং গাজীপুর মৌজায় ৫ কাঠা জমি। আব্দুল কাদের মিয়ার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তাই এই সম্পত্তির ওয়ারিশ তার দুই কন্যা ও স্ত্রী।
মুর্শিদা আক্তার তার পিতার সম্পত্তি সুষ্ঠ বন্টন ও সমাধানের অনুরোধ জানিয়ে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বরবার আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুইপক্ষ ছোট বোন মুর্শিদা আক্তার ও বোড় বোন নিলুফাকে ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর হাজির হেতে নোটিশ দেয়। নোটিশ অনুযায়ি দুই পক্ষ হাজির হয়। সেখানে সালিশ বৈঠকে ছোট বোন মুর্শিদা আক্তার পিতার মৃত্যুর পর তার বড় বোন নিলুফা নিজেকে একক ওয়ারিশ দেখিয়ে তাকে বঞ্চিত করে বাবার সব সম্পত্তি নিজ নামে করার অভিযোগ করেন। অপরদিকে নিলুফা বলেন তার পিতা তাকে সকল সম্পত্তি দিয়ে গেছেন। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিলুফাকে তার পিতা যে সকল সম্পত্তি তাকে দিয়ে গেছেন তার সকল প্রমানাদি ও দলিল নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে আসতে বলা হয়। এরপর নিলুফা ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে আর আসনেনি। বিষয়টি সমাধানে কাউন্সিলর অফিস থেকে ফের নিলুফাকে ফোন করে আসতে বলা হলেও তিনি তাতে সারা দেনননি। ৩৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সেলিম জানান, নিলুফা যোগাযোগ না করায় আমাদের পক্ষে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা ভুক্তভোগীকে আইনের স্বরণাপন্ন হওয়ার জন্য বলি।
মুর্শিদা আক্তার আরো জানান, ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে বসা হয়েছিল। ওইদিন বড়বোন নিলুফা আক্তারের ছেলে ইমরান স্থানীয় সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারা বৈঠক পন্ড করে দেয়। পরে মুর্শিদা বেগম জানতে পারেন সকল সম্পত্তি তার বড়বোন নিলুফা আক্তার নিজেকে তার পিতার একমাত্র কন্যা বানিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রি করেন। দলিল নং-৮০২২, ৫৮৬৬। বিষয়টি আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জানালে তারা হতবাক ও বিস্মিত হন। ছোট মেয়ের তার পাওনা হক আদায়ে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও বোন ও ভাগ্নে ইমরান ভয়ভীতি হুমকি ও সন্ত্রাসী কায়দায় বাধা প্রয়োগ করেন।
পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃষ্টি এবং সন্ত্রাসী ব্যবহার করে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা অনুসন্ধান করে সত্য প্রতিষ্ঠায় দেশের গণমাধ্যমসহ দেশের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সহযোগীতা প্রত্যাশা করেছেন ভুক্তভোগী মুর্শিদা আক্তার। স্থানীয়রা জানান, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তি ছিলেন হাজী আব্দুল কাদের মিয়া। তার মৃত্যুর পর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির লোভ সামলাতে পারেননি তার বড় মেয়ে নিলুফা আক্তার ও ভাগ্নে ইমরান। আইনে বলা আছে উত্তরাধিকার হিসেবে কার হক কতটুকু। তবু এখন ছোট মেয়ে মুর্শিদাকে ন্যায়বিচার লাভ ও হক প্রতিষ্ঠায় লড়াই করতে হচ্ছে।
বিষয়টি বক্তব্য জানতে নিলুফাকে তার বাসায় টিএন্ডটি নম্বরে পোন করলেও তিনি কিংবা বাসার কেউ ফোন রিসিভ করেননি।