বেরোবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা: ছাত্রদল নেতাদের সমর্থন ও শুভকামনা

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫

 

বেরোবি প্রতিনিধি :

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মী সানজিদ সরকার (স্মরণ) সহ আরও ছয় জনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের নারী শিক্ষার্থীকে মানসিক হয়রানি ও অপমানের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বেরোবি ছাত্রদলের একাংশের যুগসাজুশে ছাত্রদল কর্মী স্মরণের নেতৃত্বে বেরোবিসাসের সভাপতি সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনকে ও হেনস্তা করা হয়। ঘটনার পর ছাত্রদল কর্মীকে শুভ কামনা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ একাধিক নেতা-কর্মী।

মঙ্গলবার ( ১৬ জুলাই) রাতে ছাত্রদল কর্মী স্মরণের পক্ষ নিয়ে বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিনসহ কয়েকজন নেতা- কর্মী স্মরণকে শুভকামনা জানিয়ে ফেইসবুক পোস্ট করেন ।

এছাড়া ছাত্রদলের আহবায়ক আল আমিন সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় উপস্থিত সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টাকে কটাক্ষ করে কথা বলেন।

ফেসবুক পোস্টে অভিযোগক্ত ছাত্রদল কর্মী স্মরণকে শুভকামনা জানিয়ে বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন লিখেন,”স্মরণ শুধু ছাত্রদলের একজন কর্মী নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।শিক্ষার্থীদের জন্য লড়াই করে অল্প সময়ে সে ব্যাচের বন্ধুমহল এবং জুনিয়রদের মধ্যে তার স্থান করে নিয়েছে।

জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে যারা অসত্য ও অপপ্রচার করছে তারা ব্যার্থ হবে ভালোবাসা বিজয়ী হবে।
কোনো ষড়যন্ত্রই তোমাকে থামাতে পারবেনা স্মরণ।
শুভকামনা নিরন্তর তোমার জন্য।”

এদিকে বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিনের ফেসবুক পোস্টের পর স্মরণকে শুভকামনা জানিয়ে একই পোস্ট করেছেন আগামী কমিটিতে পদ প্রত্যাশী বেরোবি ছাত্রদল নেতা রিফাত রাফি এবং মো. ইয়ামিন।

এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব উল্লেখিত শাখা ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেইসবুকে পেজের এক বিবৃতিতেও স্মরনের পক্ষ নেন শাখা ছাত্রদল।

লিখিত অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী স্মরণসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, “লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৬ ব্যাচের সিনিয়র গত ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট মিথ্যা কথা বলে ক্লাস না থাকা সত্ত্বেও ক্লাস আছে বলে ডেকে এনে ক্লাসের সিআর সহ আরো অনেকে সবার সামনে প্রকাশ্যে আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অশালীনভাবে আমাকে অপমান করে। এসময় আমাকে আমার বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।

অভিযোগে তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয় এই ঘটনার পর আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রায় দুই ঘন্টা আটকে রাখা হয় এবং আমার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমার অভিভাবকরা আমাকে বারবার ফোন করেও পায়নি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আমাকে সরাসরি হুমকি দেয় যে, আমি যেন প্রক্টর অথবা অন্যকোন শেল্টার থাকলে নিয়ে যাই। তারা আমাকে আরও হুমকি দেয়, প্রক্টরের টেবিল চাপড়িয়ে কথা বলে। এমনকি সেখানে তারা শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে।”

এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। তিনি তার মানসিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। অন্যথায় তিনি আর ক্যাম্পাসে থাকা সম্ভব হবে না এবং বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হবেন বলেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন।

নারী শিক্ষার্থী হেনস্তার বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো: মুজাহিদুল ইসলাম বলেন,”আমরা একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছি।সেখনে ১৭ব্যাচের এক মেয়ে ১৬ব্যাচের কয়েকজনের নামে অভিযোগ করেছে।এছাড়াও পরবর্তীতে ১৬ব্যাচের সকলে ওই মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।আমরা বিষয় টি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠাবো সুষ্ঠু তদন্তের জন্য। তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। অভিযোগ প্রমানিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ঐ মেয়েটা অভিযোগ দিয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর একটা রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেবে। সেখান থেকে শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি তোলা হবে।

নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো শওকত আলী বলেন,আমরা এটা নিয়ে তদন্ত করব।যে অভিযুক্ত প্রমাণিত হবে তাকে আমরা এক সেমিস্টার হলেও বহিষ্কার করব।

উল্লেখ্য যে, ঐ শিক্ষার্থীর অভিযোগের পর ছাত্রদল কর্মী স্মরনসহ বেশ কয়েকজন মিলে ঐ নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়,তারা ওই নারী শিক্ষার্থীসহ সবাইকে ত্রিশ মিনিটের জন্য মাঠে ডাকেন এবং মুক্ত আলোচনা করেন, পরবর্তীতে তারা শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা সাতটায় ম্যাচে পৌছে দেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি তাদেরও।