৭ ডিসেম্বর ইনুর বিরুদ্ধে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। অপর সদস্য হলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এদিন দুই নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহাকে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তানভীর হাসান জোহা সোমবার (১ ডিসেম্বর) সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

এর আগে, প্রথম সাক্ষী মো. রাইসুল হক তার জবানবন্দিতে ইনুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা থাকার কথা জানিয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরের একটি মেসে থাকা এই সাক্ষী জানান যে, তার কপালেও গুলি লেগেছিল কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। তিনি ছয়জন শহীদের ঘটনা তুলে ধরে এসবের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে ইনুর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন।

গত ৩০ নভেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। একই দিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে ইনুর করা রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। ওই দিন বিচারক আটটি অভিযোগই ইনুকে পড়ে শোনান, যেখানে তিনি নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করেন।

গত ২৮ অক্টোবর ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক, যিনি কোনো অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে তার ক্লায়েন্টের অব্যাহতির আবেদন করেন। তবে প্রসিকিউশন জানিয়েছে, ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা হিসেবে কোনো দায় ইনু এড়াতে পারেন না। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছিল।

২৫ সেপ্টেম্বর এই জাসদ সভাপতির বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় সহযোগিতাসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত।

গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে কুষ্টিয়া শহরে শহীদ হন শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী ও চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ।

এছাড়া আহত হন বহু নিরীহ মানুষ। এই মামলায় প্রসিকিউশন ৩৯ পৃষ্ঠা সম্বলিত ফরমাল চার্জ দাখিল করেছে, ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও নথি হিসেবে দেওয়া হয়েছে।