জাতির সংবাদ ডটকম।।
স্বাস্থ্য খাতের নানা অসংগতি, নৈরাজ্য, সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট নিয়ে এবি পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোগীদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগ ও বিদেশমূখীতার জন্য দূর্নীতিগ্রস্ত সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। আজ বিকেল সাড়ে ৩ টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়। দুর্নীতি, দূঃশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ার মুল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার অথচ প্রয়োজনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বাজেট, শাসক গোষ্ঠীর সীমাহীন লুটপাট, স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের প্রবঞ্চনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে এখন জনগণ নূন্যতম স্বাস্থ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন এর সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক ও গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ও আইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শওকত আরমান। এবি পার্টির আহ্বায়ক সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রফেসর ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি দেশের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হওয়ার কথা যা বাংলাদেশে মাত্র ৫ শাতংশ। চরম অব্যবস্থাপনা এই খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হাসপাতাল গুলোতে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নেই চিকিৎসক বা নার্স, নেই কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কার। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ খাত গুলো অন্যতম স্বাস্থ্য খাত। লুটপাট, নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশব্যাপী সুন্দর অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও নূন্যতম চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। আলোচিত পর্দা ও বালিশকান্ড, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের গাড়ি চালকের হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া, মন্ত্রীর নামে বেনামে সম্পদের পাহাড়, করোনাকালীন সময়ে হাসপাতাল তৈরী ও টিকা কেনা নিয়ে চলেছে লুটের মহোৎসব।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরা রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। সেবা দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সরা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষমতাসীনদেন হাতে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অপেশাদারি আচরণ, পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি, সঠিক রোগ নির্ণয়ে অক্ষমতা, প্রাইভেট চেম্বারে অতিরিক্ত রোগী দেখা এবং স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে সরকারি কিছু জটিল নিয়ম কানুন দেশের মানুষকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধ্য করছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, কেন রোগ হয়, রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়, বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও রোগহীন পরিবেশ কিভাবে তৈরী করা যায় এব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলাই এখন আমাদের বড় কাজ। নন কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি রোগে ২০০০ সালে মৃত্যুর হার ছিলো ৪২.৬ শতাংশ যা ২০১৬ সালে এসে দাড়িয়েছে ৬৬.৯ শতাংশে। গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি জনস্বাস্থ্যের পিছনে এক ডলার খরচ করলে এই সমস্ত জটিল রোগ থেকে ৬ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
ডাঃ শওকত আরমান এবি পার্টির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, রাজনীতিবিদরা হচ্ছেন গণমানুষের প্রতিনিধি যারা রাষ্ট্রের প্রতিটা বিষয় নিয়ে ভাববেন বা কথা বলবেন। সকল রাজনৈতিক দল গুলো যদি স্বাস্থ্য অধিকারের মতো জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার হন তাহলে সাধারণ মানুষ তাঁর মৌলিক অধিকারগুলো ফিরে পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, মনোবিদ ও জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষক ডা. শারমিন আহমেদ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, হাদিউজ্জামান খোকন, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম খোকন, যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, ফেরদৌসী আক্তার অপি সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।