সেই নীলা এখন বিপ্লবী

শুক্রবার, আগস্ট ৩০, ২০২৪

 

বিশেষ প্রতিনিধি:

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পতিত গণহত্যাকারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রয়ে গেছে তার অসংখ্য দোসর। তারা এখন বর্ণচোরা, ছদ্মবেশী, বিপ্লবী হয়ে আমাদের সাধারণের মাঝেই মিশে আছে। কেউ রাস্তায় শিক্ষার্থীদের সাথে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে, কেউ ”শহীদ মুগ্ধ” সেজে পানি বিলিয়েছে, কেউবা ঝাড়ু দিয়েছে। আবার এখন তারাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে বর্ণচোরা হয়ে গেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে তাদের জাহির করে যাচ্ছে। ফলে আসল বিপ্লবীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে নকল বিপ্লবীদের আস্ফালনে, চতুরতায়।

 

আজ এমন একজনের মুখোশই খুলছি আমরা। সে শুধু বর্ণচোরাই নয়; সে একজন স্পাই বলে অভিযোগ উঠেছে। জীবন বিলিয়ে দেওয়া গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার কাজের সাথে মিশে করছে তথ্য পাচার, প্রতারণা। টাইম টু টাইম খবর সরবরাহ করছে তার গডফাদারদের। এমন বিষ্ময়কর তথ্য এসেছে আমাদের কাছে। প্রশ্ন আসতে পারে কে সেই গডফাদার, কাকে সে তথ্য দেয়, কার হয়ে কাজ করছে কে? আসুন পুরোটা জেনে নেই।

 

নীলা, মুক্তি, মাধুবী আক্তার মুক্তি, মাধুবী আক্তার নীলা, নীলা ইস্রাফিল, নীলা আজাদ, নীলা আরিফ, নীল কণ্যা, নীল পরি, নীলা দ্য কুইণ- কোন নামে ডাকবেন তাকে? এই এতো শত নামধারী ব্যক্তি কিন্তু একজনই। কিন্তু তার রয়েছে বহু ছদ্ম নাম, রয়েছে একাধিক জন্ম সনদ। আছে অন্তত তিন স্বামী, পাঁচ সুগার ড্যাডি, দশের অধিক বয়ফ্রেন্ড আরও অনেক কিছু। নাহ তার ব্যক্তিগত চরিত্র সমালোচনা করার জন্য আমাদের এই বিশেষ রিপোর্ট নয়; বরং এই বহুরূপী ছদ্মবেশী নীলা’র আসল রূপকে প্রকাশ করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

 

নীলা’র কাছের বন্ধু-বান্ধবী, তার নিকট থেকে প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক নারী-পুরুষ থেকে জানা যায় এই নীলার ভয়ংকর মিশনের কথা। জানা যায় তার অন্ধকার জগতের অজানা অধ্যায়ের কিছু অংশ, জানা যায় তার প্রতারণা, ব্ল্যাকমেল, এবং মাদক সিন্ডিকেটের রোমহর্ষক ব্যাকগ্রাউন্ড। যা একটি বা দুটি সংবাদে প্রকাশ সম্ভব নয়। এসবের আরও সবিস্তার জানতে এবং ক্লু খুঁজতে আমরা নীলার ফেসবুক, টিকটক, বিগো, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি ঘেটেও পেয়েছি ভয়ঙ্কর সব তথ্য। এই বহুরূপী নীলার বাড়ি গোপলগঞ্জ হলেও বেড়ে ওঠে মিরপুরের রূপনগরের টিনসডে বস্তিতে। অথচ আজ দামী প্রাইভেট কার নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে এই নীলা আসলে পতিত আওয়ালীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদের বান্ধবী বা রাতের রাণী ছিলো। সুত্র বলছে প্রথমে নীলা নিজেই সার্ভিস দিলেও লম্পট সেলিম মাহমুদের চাহিদা পুরণের জন্য দেহব্যবসায়ী নারীদের একটি গ্রুপ তৈরী করে ফেলে নীলা। আর নীর ডেরায় তখন আসতে শুরু করে রংপুরের রাশেক রহমান, মিরপুরের ইলয়াস মোল্লা সহ বিভিন্ন স্থরের ব্যবসায়ী ও পুলিশের কর্মকর্তা। নীলা সেলিম মাহমুদ এবং রাশেকের সাথে বহুবার দুবাই, থাইল্যান্ড প্রমোদ ট্যুর করেছে। সেখানে গিয়ে তার নগ্ন উন্মাদনা ও মদের পার্টির খবর অনেকেরেই জানা।

সুত্র বলছে- এই নীলা ক্লাস ফাইভ পাশ না হলেও নিজেকে পরিচয় দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট হিসেবে। যখন যেখানে সুবিধাজনক মনে হয়েছে সেখানেই কখনও ছাত্রলীগ, কখনও যুবলীগ, কখনও মহিলালীগ, কখনও সাংস্কৃতিকলীগের নেত্রী পরিচয়ে ঢুকে পড়েছে। এরপর সেলিম মাহমুদ আর রাশেক রহমানকে দিয়ে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করেছে। করেছে দেহব্যবসা, মাদক ব্যবসা ও মডেল নামে পতিতা সাপ্লাইয়ের কাজ। ব্ল্যাকমেল ও প্রতারনা তো তার নেশা আর পেশা বলে মূল অভিযোগ। এখন ওর ভয়ে মুখ খুলতে চায়না ভুক্তভোগিরা।

গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টলীগের পতনের পর সেলিম মাহমুদ গং পালিয়ে থাকলেও তাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে নীলা এবং তার একটি গ্রুপ। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায় নীলা তার গ্রুপ নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন বেশে। এদের মূল উদ্দেশ্য হলো ছাত্র-জনতার কর্ম-পরিকল্পনার তথ্য সেলিম মাহমুদ ও তার টিমকে সরবরাহ করা। এই তথ্য যে বিদেশেও যাচ্ছে না তা আমরা অগ্রাহ্য করি কি করে। ঢাকার নীলার গ্রুপের কয়েকজন সক্রিয় সদস্যের মধ্যে কুমিল্লায় কাজ করছে হাছিনা আক্তার, আমেনা আক্তার, শাহিন আক্তার সহ অন্তত ১২-১৫ জনের একটি গ্রুপ। খুলনায় রয়েছে ইভা, অধরা সহ প্রায় ১০ জন। ঢাকায় অনেকের মধ্যে প্রীতি, সাবেকমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাগ্নি ইসরাতের নাম বড় করে শোনা যাচ্ছে।

 

মন ভোলানে কথা, শারিরীক যৌন অবেদন এবং নেশাদ্রব্য দিয়ে এই নীলা মুহুর্তেই আকৃষ্ট করে ফেলে যে কেউকেই। একবার তার জালে আটকালে বের হতে হয় নি:স্ব হয়ে, সম্মান ও সর্বস্ব হারিয়ে। ভয়ংকর রাতের রাণী নীলা কি করে বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার মাঝে মিশে আছে? তার ভয়ংকর ছোবলে আবার কোন মায়ের বুক খালি করে পতিতলীগ? এমন প্রশ্ন এখন টিএসসি সহ বিভিন্ন জায়গায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন নারী জানান এই নীলা কথায় কথায় শেখ হাসিনাকে ‘মা’ বলে ডাকতো। কথায় কথায় সেলিম মাহমুদ, রাশেক রহমানকে ব্যবহার করতো, তাদের দিয়ে ফোন করিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিতো যা ওপেন সিক্রেট। কখনও কারো সাথে উনিশ-বিশ হলেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা ও মারধর করাতে। নিজে মামলা ঠুকে দিতো। এখন সে-ই বড় বিপ্লবী। ফলে আমরা সাধারনরা আছি আতংকে।

 

এই নীলা কথায় কথায় যে কাউকেই জামাত-রাজাকার বলতে দ্বিধা করতো না। ভালো মানুষকেও বিএনপি-জামাত-শিবির বানিয়ে ফাসিয়েছে প্রকাশ্যে। যার মূল পৃষ্ঠপোষক ও শক্তির উৎস ছিলো সিলিশ মাহমুদ। পরিচিতজন ও ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন- ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্বাদ ভোগ করবে কি এই নীলার মত ছদ্মবেশী বিপ্লবীরা? এদের মুখোশ খুলবে কে? বিচার করবে কে?