ছাত্রলীগ নেত্রী ও যুবলীগ নেতার প্রতারণা-জালিয়াতির শিকার চিকিৎসক সালেহউদ্দিন: সংবাদ সম্মেলনে বিচার ও প্রতিকার দাবি 

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫

 

জাতির সংবাদ ডটকম।।

 

এক নারী ছাত্রলীগ নেত্রী ও যুবলীগ নেতার প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, নির্যাতন এবং দুর্নীতির শিকার হয়ে নিজের জীবন পেশা ও আত্মমর্যাদা বিপর্যস্ত হওয়ার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দেশের নাক, কান, গলা রোগের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. সালেহ উদ্দিন সাঈদ। আজ বেলা ১২ টায় রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ এক রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ডা. সালেহ উদ্দিন মহাখালীস্থ জাতীয় ক‍্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার লিখিত বক্তব‍্য ও জালিয়াতির প্রমাণাদি স্লাইড প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এসময় বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জনাব ইকতেদার আহমেদ এবং ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হিসেবে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে ডা. সালেহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, ১৯৮৮ সালের ৩ জুন অত্যন্ত ধুরুন্ধর অর্থ লিপ্সু হাসিনা মমতাজ নামক এক নারীর সাথে আমার  বিয়ে হয়। ওই নারী কাবিন নামায় তার প্রকৃত নাম  গোপন করে লিখেছিলেন মমতাজ বেগম। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল এটা ছিল এক গভীর চক্রান্ত ও প্রতারণার কৌশল। বিয়ের বহুদিন পর তার আসল চরিত্র ধরা পড়ে।

তিনি বলেন, ২০০৩ সালে আমি ঢাকায় আমার ফ্ল্যাট বাসা ( ফ্লাট ২ বি, হাউস নং ২৮, রোড নং ১৫, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা ১২০৯) বন্ধক রেখে ব্যাংক লোন এবং নানাভাবে ধার দেনা করে চট্টগ্রামের ১৬, আগ্রাবাদে ‘দাল্লা মেডিকেল সেন্টার’ নামে আমার নিজস্ব ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠিত করি। আমি যেহেতু বিএনপি’র রাজনীতি সমর্থন করি তাই, ২০০৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান, তৎকালিন  খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এমপি উপস্থিত থেকে সেই মেডিকেল সেন্টার উদ্বোধন করেছিলেন। আমি একা ঋণ ও ধার দেনা করে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও সেখানে আমার সাবেক স্ত্রী এবং তার ভাইকেও অংশীদারীত্ব দান করি। পরবর্তীতে তাদের ভাই-বোনের যৌথ প্রতারণা, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং একজন বিদেশী নাগরিকের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়ার পর ২০১১ সালে আমি উক্ত নারীর সাথে আইনগতভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করি। যার ফলশ্রুতিতে তারা দুজনে মিলে আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে অন‍্যায়ভাবে আমার প্রতিষ্ঠানটি দখল করে নেয়। আমি নগদ এবং চেকের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দাল্লা মেডিকেল সেন্টারের সকল যন্ত্রপাতি ক্রয় করি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালে জোরপূর্বক আমার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে তারা সেটার নামকরণ করে সানওয়ে মেডিকেল সেন্টার। পুর্বের সব যন্ত্রপাতি ও ফার্নিচার ঠিকঠাক থাকলেও জালিয়াতি করে শুধু প্রতিষ্ঠানটির ও শেয়ার হোল্ডারদের নাম পরিবর্তন করে ফেলা হয়।

ভুক্তভোগী সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, আমি এবং আমার সাবেক স্ত্রীর যৌথ নামে একাউন্টের (স্ট্যন্ডার্ট চাটার্ট ব্যাংক) একটি চেক জালিয়াতির মামলায় শুধু আমাকে ফাঁসাতেই দুই জনের নামে পরিচালিত একাউন্ট এর বিপরীতে শুধু আমার নামেই মামলা দায়ের করে ফাঁসানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালে এই একাউন্ট খোলা হলেও ২০০১ সাল থেকে আমার ও হাসিনা মমতাজের দুই জনের যৌথনামে হিসাব ও লেনদেন পরিচালনা হয়ে আসছিলো। অথচ অবাক করা তথ্য হচ্ছে এখানে দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকার চেক ডিজ অনার মামলা উদ্দেশ্যমূলকভাবে  শুধু আমার নামেই দেয়া হয়েছে। দুই জনের নামের ব্যাংক একাউন্টের মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শুধু সাজা হয়েছে আমার একার।

হাসিনা মমতাজ চক্র ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নাম-প্রভাব খাটিয়ে সরকারী সম্পত্তি জবর দখল করেছে মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে সালেহ উদ্দিন বলেন, ১৬ আগ্রাবাদ বানিজ্যিক এলাকায় মেসার্স এস.জে.এন্ড.জি ফজলে এলাহী এই ভবনটি সরকারি সম্পত্তি যা পাকিস্তানিদের পরিত্যাক্ত ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ছিলো। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ভবনটি হাসিনা মমতাজ ও ফরিদ আহমেদ গংরা লীজ নিয়ে ভাড়া দিয়ে চালালেও এখন তারা দলীল মুলে সরকারি এই সম্পত্তি নিজেদের মায়ের নামে কেনা বলে দাবি করছে। যদিও দীর্ঘ দিন তারা নিয়মিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ করেই ভবনটি ব্যবহার করেছে। ১৯৭০ সালের ৩ জুলাই তারিখের একটি ভুয়া জাল দলিল তৈরি করে অন্যায়ভাবে এখন তারা এর মালিকানা দাবি করছে। এমনকি গণপুর্ত বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ভবন এবং জমির ভুয়া নামজারি করিয়ে খতিয়ানও তৈরি করে নিয়েছে তারা। নতুন করে ভবনের নাম দিয়েছে ফাতেমা হাইটস। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনও তাদের তদন্তও শুরু করেছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এই চক্র তার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা ও আন্দোলনরত ছাত্রদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে তাকে ডিবি কর্তৃক গ্রেফতার করিয়ে নির্যাতন চালান বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আজ কতিপয় প্রতারক চক্রের মুখোশ উন্মোচন করতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। এই চক্রটি পতিত আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে নানাভাবে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিরপরাধ ব্যক্তিকে নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেল জুলুম করে  আমাকে আমার পেশাগত কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন করেছে। আমি এর বিচার ও প্রতিকার চাই।

সংবাদ সম্মেলনে আইনগত বিষয়াদি তুলে ধরে বক্তব‍্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জনাব ইকতেদার আহমেদ। তিনি দোষী এই চক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।